দেশজুড়ে

মনোনয়ন কিনতে ১০ লাখ দেন, এখন ফেরত দিচ্ছেন না এমপি!

Is Jennifer Aniston currently in a relationship?

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) এনামুল হকের বিরুদ্ধে পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত অভিযোগটি করেছেন জেলার দুর্গাপুর

উপজেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আব্দুল মোতালেবের ছেলে। আব্দুল মোতালেব ও জাহাঙ্গীর আলম গত ১৩ জুন ঢাকায় গিয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে অভিযোগটি দেন।

গত বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগের একটি কপি এই প্রতিবেদককে দিয়েছেন। তবে এমপি এনামুল হক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, জাহাঙ্গীর আলমকে তিনি চেনেনই না।

জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগে বলেছেন, তিনি ২০২১ সালে দুর্গাপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। সেই লক্ষ্যে তিনি বাগমারার এমপি এনামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

এমপি তাঁকে (জাহাঙ্গীর) সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি এমপিকে ১০ লাখ টাকা দিলে দলের মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার আশ্বাস দেন। পরে জাহাঙ্গীর ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ঢাকার ধানমণ্ডি শাখা থেকে ১০ লাখ টাকা তোলেন। এরপর ১০ লাখ টাকা এমপি এনামুলের ব্যক্তিগত কার্যালয় ঢাকার পান্থপথের এনা টাওয়ারে গিয়ে তাঁর হাতে তুলে দেন জাহাঙ্গীর।

আরো পুড়ুনঃ  দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর গোপনা'ঙ্গ কেটে দিলেন স্ত্রী

টাকাগুলো এমপিকে দেওয়ার সময় জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ইকবাল হোসেন, দুর্গাপুরের মাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আব্দুল হক। এমপি টাকাগুলো নিজ হাতে নিয়ে বাগমারার উদ্দেশে বিমানবন্দরে চলে যান। ৩০ জানুয়ারি গণভবনের মনোনয়ন বোর্ড থেকে দুর্গাপুর পৌরসভায় প্রার্থী হিসেবে অন্য ব্যক্তির নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর জাহাঙ্গীর এমপি এনামুলকে বিষয়টি নিয়ে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘চিন্তা কোরো না, আমি আছি তো।’ জাহাঙ্গীর অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, ‘এমপি এনামুলের ওই কথা শোনার পরে টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় থাকি।

এরপর টাকার জন্য এমপির কাছে ঘুরতে থাকি। কিন্তু টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে এমপি কখনো ঢাকায়, কখনো রাজশাহীতে ডেকে নিয়ে ঘোরাতে থাকেন। একপর্যায়ে এমপি বলেন, ‘টাকা নেতাদের দিয়ে দিয়েছি, তারা তো ফেরত দেবে না। আমি কোথা থেকে দেব। তার চেয়ে তুমি সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের একজন প্রার্থী সংগ্রহ করো; আমি তাঁকে মনোনয়ন নিয়ে দেব। সেখান থেকে তুমি তোমার টাকা ফেরত নিয়ো।’
জাহাঙ্গীর অভিযোগে বলেন, ২০২২ সালের ইউপি নির্বাচনের তফসিল হলে দুর্গাপুরের মাড়িয়া ইউনিয়নে মো. আব্দুল হককে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য এমপি এনামুলের দ্বারস্থ হন জাহাঙ্গীর। তখন এমপি বলেন, ‘তোমাদের কোনো টাকা লাগবে না। টাকা তো দেওয়া আছে। শুধু দপ্তর সম্পাদককে দেওয়ার জন্য এক লাখ টাকা দাও।’ পরে এমপির হাতে এক লাখ টাকা দেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু আব্দুল হকও মনোনয়ন পাননি। এরপর সব টাকা ফেরত চাইলে এমপি তা ফেরত দেননি।

আরো পুড়ুনঃ  টাকা না পেয়ে প্রেমিকার ভিডিও ছড়িয়ে দিলো প্রেমিক, অতঃপর...

এসব বিষয়ে অবগত আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ। টাকাগুলো ফেরত দিতে তিনিও এমপিকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু এমপি তা দেননি। জাহাঙ্গীর অভিযোগে বলেন, ‘আমার বাবা ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। এমতাবস্থায় টাকা ফেরত পেলে বাবার ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ মেটানো যেত। এমপি এনামুলের কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা উদ্ধারে সহযোগিতা করার জন্য ওবায়দুল কাদেরকে অনুরোধ জানিয়েছেন জাহাঙ্গীর। জাহাঙ্গীর গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা অভিযোগ দেওয়ার পর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি সমাধানের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামালকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনিও আমার টাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারেননি।’

মো. আব্দুল হক বলেন, ‘আমার সামনেই টাকাগুলো দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জাহাঙ্গীরকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে পারেননি এমপি এনামুল।’
ডা. সৈয়দ মুজাফফর আহমেদ বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি। তবে এমপিকে টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে অনুরোধ করতে পারিনি। কারণ তিনি আমার খুব ক্লোজ। আবার বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় জাহাঙ্গীর আলমের কথায় এমপিকে টাকা ফেরতের কথা বলতে পারিনি।’ জাহাঙ্গীরের বাবা আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘টাকাগুলো ফেরতের আশায় শেষ পর্যন্ত দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামালকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আশা করছি, টাকাগুলো এখন ফেরত পাব। টাকা পেলে আমার ক্যান্সারের চিকিৎসাটা করাতে পারব।’

এস এম কামাল বলেন, ‘অভিযোগটি এখনো আমি পাইনি। অভিযোগের কপি পেলে আমি বিষয়টি দেখব।’ জানতে চাইলে এমপি এনামুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নাই। আমি মনোনয়ন দেওয়ার নামে কারো কাছ থেকে টাকা নিইনি। জাহাঙ্গীরকে আমি চিনিই না।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker