জাতীয়

ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ নিয়ে হাই স্টেক গেম?

Is Jennifer Aniston currently in a relationship?

এক সপ্তাহের মধ্যে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে দুবার। দুটি মিডিয়া—একটি চীনের গ্লোবাল টাইম এবং অন্যটি রাশিয়ার রিয়া নোভোস্তি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অবস্থান ও ব্রিকসে বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার আগ্রহের বিষয়ে প্রশ্ন দুটি করে। এর আগে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শেষ কবে বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন হয়েছিলে, সেটি গবেষণার বিষয়। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশ নিয়ে দুটি প্রশ্ন করাকে বিশেষজ্ঞরা তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন।

চীনের এই কূটনীতি একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও পশ্চিমা বিশ্বকে একটি বার্তা দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে এই অঞ্চলের বিভিন্ন শক্তির পাশা খেলায় বাংলাদেশ একটি ‘হাই স্টেক গেম’-এর বড় একটি ঘুঁটিতে পরিণত হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও দিল্লি ইউনিভার্সিটির বঙ্গবন্ধু চেয়ার মো. শহীদুল হক বলেন, ‘কূটনীতিতে নুয়্যান্স (অতি সূক্ষ্ম তারতম্য) বোঝাটা অত্যন্ত জরুরি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হঠাৎ বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন করাকে একটি বার্তা হিসেবে বিবেচনা করা যায়।’

সাধারণভাবে এ অঞ্চলকে নিয়ে, বিশেষ করে বাংলাদেশকে ঘিরে চীনের একটি বড় স্বার্থ রয়েছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে বর্তমান জটিল ভূ-রাজনীতি এবং বাংলাদেশকে নিয়ে বিভিন্ন দেশের আগ্রহের বিষয় উল্লেখ করে শহীদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তি, রাজনৈতিক পরিপক্বতা এবং ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল সম্ভাবনার কারণে বিভিন্ন দেশ এখানে অবস্থান নিচ্ছে তাদের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে।’

একই ধরনের মত প্রকাশ করে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন এমনি এমনি হয় না। এর একটি প্রাসঙ্গিকতা থাকে। বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহ আছে বলেই প্রশ্ন হয়েছে।’

বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে অন্যান্য দেশের আগ্রহের পাশাপাশি বেইজিংয়ের আগ্রহ থাকবে, এটা স্বাভাবিক বিষয়।’

হাই স্টেক গেম

জুয়া খেলায় যখন বড় অঙ্কের অর্থ বাজি ধরা হয়, তখন সেটি হাই স্টেক গেম হয়। বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রকাশ্য আগ্রহ এবং যে পরিমাণ গোপনীয় তথ্য, যেমন সম্প্রতি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার বিষয় মিডিয়ায় ফাঁস করা হয়েছে—সেটি বিবেচনায় নিলে অনুমান করা যায়, পর্দার অন্তরালে আরও অনেক কিছু হচ্ছে।

বিশ্বের ৪২তম বৃহৎ অর্থনীতি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রম প্রকাশ্য আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং আঞ্চলিক শক্তি ভারত ও জাপানের বাংলাদেশ নিয়ে অবস্থানের কারণে বাজির পরিমাণ বেশি, এটি ধরে নেওয়া যায়।

এ বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘মনে হচ্ছে এখানে হাই স্টেক খেলা হবে। কূটনীতিতে একটি কথা আছে, শক্তিশালীরা যা চায়, সেটি করবে এবং দুর্বলরা সেটি সহ্য করবে। এখানে বিভিন্ন শক্তির মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে যে বোঝাপড়া হবে, সেটি হয়তো এ সময়ে জানা সম্ভব হবে না এবং নিকট-ভবিষ্যতে আমরা জানতেও পারবো না। হয়তো বিভিন্ন বক্তব্য বা শক্তিদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া দেখে আমাদের অনুমান করে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

বর্তমানে ভূ-রাজনীতি ব্যতিক্রমমূলক সময় অতিক্রম করছে এবং এ সময়ে ব্যতিক্রমধর্মী কূটনীতির প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন এই পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ।

বিভিন্ন শক্তির প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ নিয়ে চীনের আগ্রহের মধ্যে অতি সূক্ষ্ম তারতম্যের বিষয়টি অন্য শক্তিগুলোর নজরে আসবে, কিন্তু তারা প্রকাশ্যে মন্তব্য করবে না।

এ বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত কূটনীতিতে অত্যন্ত পরিপক্ব। তারা প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবে এবং তাদের প্রতিক্রিয়াও চিন্তাপ্রসূত হবে।’

বাংলাদেশের করণীয়

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ও ব্রিকস নিয়ে প্রশ্ন থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, এ অঞ্চলে কারও একচ্ছত্র আধিপত্য হতে দেবে না বেইজিং।

এ বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময় ভারসাম্য রক্ষা করে পরিপক্ব কূটনীতি অনুসরণ করেছে। এই জটিল পরিস্থিতিতে পুরোনো পন্থা অনুসরণ করাই শ্রেয়। একটি দেশকে অগ্রাধিকার বা বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে–এ ধরনের কোনও বার্তা দেওয়া ঠিক হবে না।’

চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে কোনও দেশ হয়তো ইতিবাচক, হয়তো অন্যরা তত বেশি ইতিবাচক নয়। এখানে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা হয়তো থাকবে, কিন্তু আধিপত্য বিস্তার করতে দেওয়া যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন সবার আগ্রহকে কাজে লাগানো ও সুষ্ঠু সম্পর্ক বজায় রাখা দরকার।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker