ভাঙ্গায় নিহত ৭ জন একই পরিবারের, যাচ্ছিলেন ঈদ করতে

দীর্ঘ এক মাস ঢাকায় চিকিৎসা শেষে মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ফেলাননগর গ্রামের তাসলিমা বেগম।
কথা ছিল, পরিবারের সবাই মিলে সুন্দর সময় কাটাবেন। নাতি-নাতনিরা নানাবাড়িতে ছুটি উপভোগ করবে।
কিন্তু সেই ফেরাই যে তাদের শেষযাত্রা হবে, তা কে-ই বা বুঝেছিল! শনিবার সকালে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিকাণ্ডে যে আটজনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে সাতজনই এক পরিবারের।
৫০ বছর বয়সী তাসলিমা বেগমের সঙ্গে পুড়ে মারা গেছেন তার দুই মেয়ে কমলা (৩০) ও বিউটি বেগম (২৬), কমলার ছেলে আরিফ (১২), হাসিব (১০), মেয়ে আফসা (১) এবং বিউটির ছেলে মেহেদী (১০)।
নিহত অপরজন হলেন মাইক্রোবাসের চালক মৃণাল মালো। তিনি সদর উপজেলার বাসিন্দা। তাসলিমা ফেলাননগর গ্রামের সৌদি প্রবাসী আজিজার শেখের স্ত্রী। কমলার স্বামীর নাম আলমগীর, তিনি একই উপজেলার শেখর ইউনিয়নের মাইটকুমরার বাসিন্দা এবং বিউটির স্বামী রনি আলফাডাঙ্গার কুচিয়াগ্রামের বাসিন্দা। এদের মধ্যে কমলা বেগম রাজধানীর চকবাজারে বসবাস করতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, দ্রুতগামী মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম এলাকায় বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের একটি ফ্লাইওভারের রেলিংয়ে ধাক্কা দিলে মুহূর্তে সেটিতে আগুন ধরে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন মারা যান। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আরও দুজন। এবং ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা যান গাড়ির চালক।
বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে নিহত সাতজন একই পরিবারের, যাচ্ছিলেন ঈদ করতে
জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গাড়িটির সিলিন্ডার ফেটে আগুন ধরে যায়।”
পরিবারের সাতজনের মৃত্যুর খবরে গোটা এলাকায় কান্নার রোল উঠেছে। কিছুক্ষণ পরপরই মুর্ছা যাচ্ছেন চায়না বেগম।
এক মাস ধরে মাকে দেখেননি বলে বারবার প্রলাপ করছিলেন তিনি।
চায়না বেগম বলেন, “এক মাস মাকে দেখি না, চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বোন-ভাগনেদের নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। আর কথা হবে না মায়ের সঙ্গে। এ শোক আমরা কীভাবে সইব?”
আজিজার শেখের চাচাতো ভাই মো. মাসুদুর রহমান (৫২) বলেন, এক মাস আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় ঢাকার নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাসলিমাকে।সেখানে দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে সকালেই পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সেই ফেরা যে এমন হবে, তা স্বপ্নেও ভাবেনি কেউ।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়া, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারেফ হোসাইন, ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব, গুনবহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা এসেছিলেন তাসলিমার বাড়িতে। পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর শোকও প্রকাশ করেন তারা।
ইউএনও মোশারেফ হোসাইন জানান, জেলা প্রশাসক নির্দেশ অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসন নিহত তাসলিমার পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করবে। প্রাথমিকভাবে নিহতদের দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।