
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপির নেতিবাচক ধ্বংসাত্মক, মানুষ পোড়ানোর অপরাজনীতি, নির্বাচন প্রতিহত করা ও বয়কট করার অপরাজনীতির কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে।’
মঙ্গলবার (৬ জুন) সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিএনপি মহাসচিবের ‘আওয়ামী লীগ সরকারের কারণেই নতুন মার্কিন ভিসানীতি’ বক্তব্যের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর বিএনপির অন্তর্জ্বালা শুরু হয়েছে। কারণ তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নাকচ করেছে এবং অন্য কোনও দেশের সমর্থনও পায়নি। ফলে তাদের পক্ষে আগের মতো ‘নির্বাচন প্রতিহত করবো, বর্জন করবো’ এগুলো বলার সুযোগ নাই। যে কারণে ফখরুল সাহেব একটু হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে একেক সময় একেক কথা বলছেন। বিভিন্ন কথা বলে আত্মতুষ্টি লাভের চেষ্টা করছেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সব কথার শেষ কথা হচ্ছে তাদের আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। নির্বাচন প্রতিহত করার রাজনীতি তাদের পক্ষে আর করা সম্ভবপর নয়। তাই তাদের অনুরোধ জানাবো, দেশে গন্ডগোল করার পরিকল্পনা না করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।’
বিএনপি-জামায়াত সব সময় এক
বিএনপি ও জামায়াত আবার এক হচ্ছে, জামায়াত ১০ জুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে, সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত তো সব সময় এক আছে। তারা কোনও সময় বিচ্ছিন্ন হয়নি। মাঝেমধ্যে মৌনতা অবলম্বন করে। নির্বাচন সামনে রেখে তারা দেশে গন্ডগোল করার চেষ্টা করবে। সেই গন্ডগোল করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছে। এটি কোনও সাধারণ রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, গন্ডগোল করার উদ্দেশ্যেই এমন সিদ্ধান্ত। তবে তাদের গন্ডগোল করতে দেওয়া হবে না। আমরা সতর্ক আছি, বিএনপি-জামায়াতকে কীভাবে মোকাবিলা করতে হয় দেশের জনগণ জানে।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা কর্মসূচি ঘোষণা করবে, এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে জামায়াত ও বিএনপি সহিংসতা করার লক্ষ্যেই কর্মসূচি সাজাচ্ছে বলে আমরা মনে করি। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে একটি গন্ডগোল করে বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করা, পানি ঘোলা করা, পানি ঘোলা করে সেখান থেকে মাছ শিকার করা। সেটি করার সুযোগ তারা পাবে না।’
গুজব প্রতিরোধ করবে সরকার ও মূলধারার গণমাধ্যম
নির্বাচন সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুজবের উদ্ভব হচ্ছে, এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব বিশ্বব্যাপী একটি চ্যালেঞ্জ। আমি ক’দিন আগে এশিয়া মিডিয়া সামিটে গিয়েছিলাম সেখানে এই বিষয়টা গুরুত্বের সাথে আলোচনা হয়েছে এবং সামিটের ঘোষণাপত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। বিএনপি-জামাতের পেইড এজেন্ট যারা খুনের দায়ে, দুর্নীতির দায়ে পলাতক তারা বিদেশে বসে আর কিছু ব্যক্তিবিশেষ দেশ থেকে নানা গুজব ছড়ায়।’
গুজব প্রতিরোধের জন্য সরকার নানা ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আগামী জুলাই থেকে বিটিআরসির সক্ষমতা বাড়বে এবং আমাদের মন্ত্রণালয়েও গুজব প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আর মূলধারার গণমাধ্যম পত্রিকা এবং টেলিভিশন করোনার মধ্যেও গুজবের বিরুদ্ধে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। আমি আশা করবো, ভবিষ্যতেও নির্বাচনকে সামনে রেখে হোক, যে কোনো প্রেক্ষাপটেই হোক, গুজবের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম সবসময় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।’
বিএনপির বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘেরাও: প্রস্তুত জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
৮ জুন বিএনপির বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো আগে বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল, এবার যদি সেটা করে, তাহলে জনগণ তাদের প্রতিহত করবে, উচিত শিক্ষা দেবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও প্রস্তুত আছে। আর তারা তো বিদ্যুৎ দিতে পারেনি। তারেক রহমান খাম্বা লিমিটেড কোম্পানি করে বিদ্যুতের খাম্বা বানিয়েছিল, বিদ্যুৎ না দিয়ে শুধু খাম্বা লাগিয়েছিল। আশা করবো তারা যখন বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘেরাও করতে যাবে, তারেক রহমান যে শুধু খাম্বা দিয়েছিল, সেটিও মাথায় রাখবে।’
বিদ্যুৎ সরবরাহে ছেদ নিয়ে প্রশ্নে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান বলেন, ‘আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় দেশে মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেতো। এখন শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়। এখন মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে, এটি ঠিক কিন্তু বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন ১৫ দিনের মধ্যে এটা পরিবর্তন হবে।’
বিদ্যুতের এই অসুবিধা বিশ্বব্যাপী উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জার্মানিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এক সেকেন্ডের জন্যও কখনও বিদ্যুৎ যায়নি। সেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিদ্যুতের রেশনিং করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবাইকে এসএমএস করে বলা হয়েছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ীভাবে ব্যবহার করার জন্য।