দেশজুড়ে

বঙ্গবন্ধুর নাম মনে থাকে না প্রধান শিক্ষকের!

Is Jennifer Aniston currently in a relationship?

মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকেন ঢাকা মহানগরীর ফরিদাবাদে বাংলাদেশ ব্যাংক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফা কামাল। আর উপস্থিত থাকলেও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মনে থাকে না তার। শুধু তাই নয়, বক্তব্যের শেষে বলেন, ‘নামটা আমার নেওয়া উচিত ছিল’। অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ঢাকা মহানগরীর ফরিদাবাদ বাংলাদেশ ব্যাংক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফা কামালের বিরুদ্ধে তদন্ত করেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. আরিফুল হক। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি বোর্ডে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি।

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়— বাংলাদেশ ব্যাংক আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফা কামাল ২০১৯ সালে মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চের মূল অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। ২০১৮ সালের বিজয় দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামটা পর্যন্ত উচ্চারণ করতে ভুলে যান তিনি। ওই অনুষ্ঠান শেষে মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘নামটা আমার নেওয়া উচিত ছিল’।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকার, রাষ্ট্র ও অফিসবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন এই প্রধান শিক্ষক। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক মোস্তাফা কামালের দেওয়া বক্তব্যের অডিও রেকর্ড তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণ হিসেবে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। প্রতিবেদনের সুপারিশে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়— ‘রাষ্ট্র, সরকার, অফিসবিরোধী কর্মকাণ্ড করা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ না করায় প্রধান শিক্ষক মোস্তাফা কামালকে চাকরি থেকে বরখাস্ত যেতে পারে।’

প্রধান শিক্ষক মোস্তাফা কামালের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগের প্রমাণ তুলে ধরেন তদন্ত কর্মকর্তা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিবের ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি সই করা চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাকির হোসেন ফকিরকে সরকারিভাবে প্রশ্নপত্র তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই প্রশ্ন তৈরির কাজে বাধা দেন প্রধান শিক্ষক। তার নির্দেশ না মেনে প্রশ্ন তৈরি করায় শিক্ষক জাকির হোসেন ফকিরকে শোকজও করেন প্রধান শিক্ষক মোস্তাফা কামাল।

তদন্ত প্রতিবেদনে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া অপরাধ বিবেচনায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করারও সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বরের ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চিঠিতে বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মো. লোকমান হোসেন তালুকদারকে চাকরিতে স্থায়ী করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করেননি প্রধান শিক্ষক। শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষক মো. লোকমান হোসেন তালুকদারকে স্থায়ী করারও সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান শিক্ষক মোস্তাফা কামাল অফিস সহকারী আসাদুজ্জামানের যোগসাজশে ভর্তি বাণিজ্য করেন। ভর্তি বাণিজ্য করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় অফিস সহকারী আসাদুজ্জামানকে চাকরির বিধি অনুযায়ী বরখাস্ত করার সুপারিশ করা হয় বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনের সঙ্গে ভর্তি বাণিজ্যের অডিও রেকর্ডও দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্ত প্রতিবেদন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটিকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। আর সুপারিশ বাস্তবায়ন না করলে ম্যানেজিং কমিটি ভেঙে দেওয়া যেতে পারে বলেও শিক্ষা বোর্ডের কাছে সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. আরিফুল হক।

প্রধান শিক্ষকের এসব অপকর্মের প্রমাণ পেয়ে রবিবার (২৮ মে) তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে দফাওয়ারি জবাব দিতে বলা হয়েছে সাত দিনের মধ্যে। জবাব দিতে ব্যর্থ হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কেন প্রধান শিক্ষকের বেতন ভাতা বন্ধ করার সুপারিশ করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে নোটিশে।

নতুন করে অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক মোস্তাফা কামালের বিরুদ্ধে। অভিযোগে জানা গেছে, গত ২০ মে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৪৩ নম্বর পান ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম। কিন্তু পরে প্রধান শিক্ষক নিজের স্বার্থ রক্ষায় মনিরুল ইসলামকে বাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যে মৌখিক পরীক্ষায় দুর্নীতির আশ্রয় নেন। প্রধান শিক্ষক রহস্যজনক কারণে মৌখিক পরীক্ষায় স্নাতক পাস একজন শিক্ষকের নম্বর বাড়িয়ে দেন। যদিও নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার পরও দুই প্রার্থীর নম্বর সমান হয়ে যায়। এই সুযোগে মনিরুল ইসলামকে বাদ দেওয়ার সব প্রক্রিয়া হাতে নেন প্রধান শিক্ষক।

আরো পুড়ুনঃ  সার্টিফিকেট পুড়িয়ে সরকারি চাকরি পেলেন সেই ইডেন ছাত্রী!

জানা গেছে, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম ২০২২ ও ২০২৩ সালে রাজধানীর শাহ আলী থানা এলাকার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন। প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স মাস্টার্স করা এই শিক্ষকের আইসিটিসহ বিভিন্ন বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ রয়েছে। ছাত্রলীগ করার ব্যাকগ্রাউন্ড থাকায় মনিরুলকে বাদ দিয়ে স্নাতক পাস এক প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন প্রধান শিক্ষক মোস্তাফা কামাল।

তদন্ত প্রতিবেদনের অভিযোগ প্রমাণের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘বিদ্যালয়ে আসেন, আমি সব জানাবো।’ সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘সব মিথ্যা’। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় চলে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker