দেশজুড়ে

প’রকীয়া নিয়ে প্রবাসী আলতাফের বক্তব্য বানোয়াট, চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন নি’হতদের স্বজন

Is Jennifer Aniston currently in a relationship?

নোয়াখালীর মাইজদীতে বাসায় ঢুকে মা ও মেয়েকে নৃশংসভাবে কু’পিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে মা নুর নাহার বেগমের প’রকীয়া সম্পর্কের কথা জানিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন গ্রেফতার আলতাফ হোসেন। যদিও তার বক্তব্যকে বানোয়াট বলছেন স্বজনরা। তাদের দাবি, আলতাফ বাঁচার জন্য এসব বলে থাকতে পারেন। কিন্তু পুলিশ তার কথাকে সত্য ধরে নিয়ে তাদের কিছু বলার সুযোগ দেয়নি।

বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন অভিযোগ করেন নি’হত নুর নাহার বেগমের স্বামী ও ফাতিমা আজিম প্রিয়ন্তীর বাবা ফজলে আজিম কচি। এ সময় বিষণ্ন চোখে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমার মেয়ে তো নি’র্দোষ। আমার নির্দোষ-নিষ্পাপ মেয়ে চলে গেল। আমার ছেলেকে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। আমি চাই আমার স্ত্রী ও মেয়ে হ’ত্যার সঠিক বিচার হোক।’

নোয়াখালী পুলিশ সুপারের দেয়া বক্তব্য মেনে নিতে পারছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসপি তো এককভাবে বলে গেছেন। ছেলের (আলতাফ) কথা সত্য হোক বা মিথ্যা হোক, তার কথা এককভাবে বলে গেছেন। সে (আলতাফ) তো বাঁচার জন্য ভালো-মন্দ অনেক কথাই বলবে। স্থানীয়রা যখন তাকে আটক করে, তখন সে অনেক ধরনের কথাবার্তা বলেছে। আমার ছেলে এবং আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। আমি চাই আমার স্ত্রী ও মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার হোক।’

 

নিহত নুর নাহার বেগমের ছোট ভাই আবু হানিফ বলেন, ‘আমরা ৪ ভাই ২ বোন। আমার বোন নুর নাহার আমার বড়। তিনি স্নাতক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন। আমার ভগ্নীপতির সঙ্গে তার কোনো পারিবারিক কোন্দলের কথা আমরা কখনো শুনিনি। আমার বোন এবং ভাগনিকে নৃশংসভাবে খু’ন করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা আলতাফ নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার এ ঘটনা নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। সেখানে আসামি আলতাফের সঙ্গে আমার বোনকে জড়িয়ে (পরকীয়া) যা বলা হয়েছে তা মিথ্যা। আমার বোন এমন প্রকৃতির ছিলেন না। কেউ কখনো আমার বোনের নামে খারাপ কথা বলতে শুনিনি।’

আরো পুড়ুনঃ  ‘আমার অবুঝ বাচ্চাগুলা এতিম হইয়া গেল’

নুর নাহার বেগমের আরেক ভাই ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘আসামি নিজে বাঁচার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারে। অথচ শুধু তার দেয়া বক্তব্য পুলিশ এভাবে বলতে পারে না। খুনির কথা শুনে তিনি কীভাবে সব সত্য মনে করলেন? খু’নির বলা সব কথা তিনি জনসম্মুখে এবং মিডিয়ায় বলে আমার বোন এবং ভাগনিকে দ্বিতীয়বারের মতো খু’ন করেছেন।’ এর আগে, বুধবার সকালে নোয়াখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গুপ্তাংক এলাকার বার্লিংটন মোড়ের নিজ বাসায় নুর নাহার বেগম (৪২) ও তার মেয়ে ফাতিমা আজিম প্রিয়ন্তীকে (১৬) কুপিয়ে জখম করা হয়। মা নুর নাহার বেগম ঘটনাস্থলে মারা গেলেও মেয়েকে হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়। এ ঘটনায় স্থানীয়রা দৌড়ে পালানোর সময় আলতাফ হোসেন নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।

গ্রেফতার আলতাফ হোসেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নের চরমেহের গ্রামের মৃত আবুল কালামের ছেলে। এদিকে নুর নাহার বেগম ও তার মেয়ে প্রিয়ন্তী হ’ত্যার ঘ’টনায় বুধবার রাতে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বী’কারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি ওমানপ্রবাসী আলতাফ হোসেন। যেখানে নুর নাহার বেগমের পরকীয়া সম্পর্কের কথা তিনি বলেছেন। দোষ স্বীকার করে আলতাফ হোসেন আদালতে জানান, নূর নাহার বেগমের সঙ্গে তার ওমান থাকাবস্থায় মোবাইল ফোনে রং নম্বরে পরিচয় হয় এবং তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে নুর নাহার বেগম তাকে ভিসা বাতিল করে বাংলাদেশে এসে হোটেল ব্যবসা করার জন্য বলেন। তার কথায় আলতাফ গত ৮ জুন বাংলাদেশে এসে দত্তের হাট এলাকায় একটি মেসে ওঠেন। এরপর ১০ জুন নূর নাহারের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। পরদিন ১১ জুন পুনরায় নূর নাহার বেগমের বাসায় গিয়ে তার কাছে প্রতিশ্রুত তিন লাখ টাকা দাবি করেন। তখন নুর নাহার দু-এক দিনের মধ্যে টাকা দেবেন বলে জানান তাকে। পরদিন নুর নাহারের বাসায় গেলে বাসা তালাবদ্ধ পান তিনি।

আরো পুড়ুনঃ  প্রবাসীর ঘুমন্ত স্ত্রী ও পুত্রকে হ'ত্যার ঘটনায় টুপি দিল খু'নির খোঁজ

বুধবার (১৪ জুন) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে আসামি নূর নাহারের বাসায় গিয়ে আবারও তিন লাখ টাকা দাবি করেন। ওই সময় নূর নাহার বেগম টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আলতাফের সঙ্গে তার বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে আলতাফকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করেন নূর নাহার। এরপর পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানোর ভয় দেখালে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে আলতাফ তার পকেটে থাকা ছুরি দিয়ে নূর নাহারের গলায় আঘাত করেন। এ সময় নূর নাহার চিৎকার করে তার মেয়ে প্রিয়ন্তীর রুমে চলে যান। আলতাফ ওই রুমে গিয়ে নুর নাহারের গলায় এবং ঘাড়ে এলোপাতাড়ি আ’ঘাত করতে থাকেন। ওই সময় মেয়ে প্রিয়ন্তী ঘুম থেকে উঠে মাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। মায়ের পিঠে উপুড় হয়ে পড়লে তাকেও একাধিক ছুরিকাঘাত করেন আলতাফ।

আলতাফ হোসেন জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, নুর নাহার বেগম প্রতারণা করায় তাকে হত্যা করেছেন, তবে তার মেয়ে ফাতিহা আজিম প্রিয়ন্তীকে হত্যা করার ইচ্ছা ছিল না তার। অপরদিকে আলতাফকে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন আটক করেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আলতাফ বলেছিলেন, ঘটনার সঙ্গে আরও দুজন জড়িত ছিল। স্থানীয়দের প্রশ্ন: আলতাফ গ্রেফতার হলেও অজ্ঞাতপরিচয় অপর দুই ব্যক্তি কে? তবে এ বিষয়ে পুলিশ বলছে, আলতাফ নিজেকে বাঁচানোর জন্য বা ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে এ কৌশল করেছেন। সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, হত্যার ঘটনায় নিহত নূর নাহার বেগমের স্বামী বাদী হয়ে বুধবার বিকেলে একটি হত্যা মামলা করেন। তবে ওই মামলায় তিনি কোনো আসামির নাম উল্লেখ না করে একাধিক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করেছেন। সেই মামলায় গ্রেফতার আলতাফকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওসি জানান, মামলার তদন্ত চলছে। বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাতে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ বের হয়ে আসে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker