দুই শিশুর মৃত্যু: তেলাপোকা মারার ওই কীটনাশক নিয়ে যে তথ্য দিলো ডিবি (ভিডিও)

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় তেলাপোকা মারার ‘বিষের ক্রিয়ায়’ দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় বালাইনাশক পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস কোম্পানির এমডি ও চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান হারুন অর-রশীদ। ভিডিও কনফারেন্সে এ সময় যুক্ত হন শিশু দুটির বাবা মোবারক হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর-রশীদ জানান, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পোকামাকড় নিধনের কাজে ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেডের ব্যবহার করা কীটনাশক সাধারণত গুদাম, গার্মেন্টস, কলকারখানাসহ উন্মুক্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু তারা সেটি বাসা-বাড়িতে ব্যবহার করেছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী পরিবারকে যথাযথভাবে সর্তক না করায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ডিবি প্রধান আরও জানান, ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও এমডি আত্মগোপন করেন। তারা গাড়িতে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তাদের ব্যবহার করা কীটনাশকের অনুমোদন ছিল কিনা তা যাচাই-বাছাই চলছে।
কীটনাশক বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট সমৃদ্ধ এই কীটনাশক বড় গার্মেন্টস, বীজ গুদাম ও বাণিজ্যিক স্থানে ব্যবহার করা হয়। এগুলো বাসা বাড়িতে ব্যবহার করা যায় না।
আর ব্যবহার করলেও ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়। এছাড়া বসুন্ধরার বাসাটিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক বিষ সঠিক অনুপাতে ছিল না। ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই কীটনাশক কীভাবে কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, এর অনুমোদন ছিল কি-না, এর রাসায়নিক অনুপাত সঠিক ছিল কি-না এসব বিষয়ে জানতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ডিবি প্রধান বলেন, তীব্র দাবদাহের সময়ে কীটনাশক মানব জীবনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পেস্টিসাইড কোম্পানির কর্মকর্তাদের বিষয়টি উপলব্ধি করা দরকার ছিল। কিন্তু অর্থের লোভে তারা স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি উপলব্ধি না করে এবং পরিবারের সদস্যদের যথাযথ নিরাপত্তা উপদেশ না দিয়েই আনাড়ি কর্মচারীদের দিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করেন। যার ফলশ্রুতিতে দুই শিশু-কিশোরের জীবন ঝরে যায়। অসুস্থ হন পরিবারের অন্য সদস্যরাও।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২ জুন) বসুন্ধরার আই ব্লকের একটি নতুন বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা তেলাপোকা মারার বিষ স্প্রে করেন। এর দুদিন পর ভুক্তভোগী পরিবারটি ওই বাসায় ওঠে। বাসায় প্রবেশ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। পরে তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে রোববার (৪ জুন) ভোরে প্রথমে শাহিল মোবারত জায়ানের মৃত্যু হয়। পরে রাত ১০টায় মারা যায় শায়ান মোবারত জাহিন (১৫)।
দুই শিশুর মা শারমিন জাহান লিমা ও বাবা মোবারক হোসেনও বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।