সারাদেশ: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর সিনেমা ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ মুক্তির আগে থেকেই ছিল আলোচনায়। জাতির পিতাকে সিনেমার পর্দায় দেখার অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। অবশেষে সেই অপেক্ষার শেষ হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দেশের ১৫৩টি প্রেক্ষাগৃহের দুই শতাধিক স্ক্রিনে সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে।বহুল প্রতীক্ষিত ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটি মুক্তির পর সাধারণ দর্শকদের পাশাপাশি দেশের তারকারাও বেশ উচ্ছ্বাস অনুভূতি প্রকাশ করছেন। বড় পর্দায় সিনেমাটি দেখার জন্য প্রথম দিনই দেশের প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করেন দর্শনার্থী। সিনেমাটি দেখে কান্না করতে দেখা গেছে সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে তারকাদেরও।
গত বৃহস্পতিবার সকালে সিনেমার প্রিমিয়ার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ মিলনায়তনে চলচ্চিত্রটির প্রিমিয়ার শো হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ভারতের খ্যাতিমান নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ। বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে নির্মিত ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটি দেখে অনেক তারকা সোশ্যাল মিডিয়ায় উচ্ছ্বাস আর ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। আর যারা অভিনয় করেছেন, তাদের কেউ কেউ মনে করছেন, এটিই তাদের ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন। ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাসরিন আক্তার নিপুণ। হলে গিয়ে দেখেছেন ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তিনি। নিজেকে সামলাতে না পেরে নিপুণ বলেন, ‘দেখতে পারছেন আমার চোখ থেকে এখনো পানি পড়ছে। এর পরই নিপুণ আবার কাঁদতে শুরু করেন। কাঁপা কণ্ঠে বলেন, সিনেমার শেষ মুহূর্ত প্রসঙ্গে বলার কিছুই নেই।
নিপুণ আরও বলেন, হয়তো এতদিন এমন সিনেমা নির্মাণ করতে কেউ চেষ্টা করেনি। তাই এমন সিনেমা দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল দর্শক। আমরা অনেক ভাগ্যবান যে, শেষ পর্যন্ত এমন একটি সিনেমা দেখতে পারলাম। তরুণ প্রজন্ম ও বাংলাদেশের সবাইকে সিনেমাটি দেখার আমন্ত্রণও জানিয়ে নিপুণ বলেন, এই সিনেমার শেষ দৃশ্য মনে রাখার মতো। কোনো দর্শকই সিনেমার শেষ দৃশ্য দেখে নিজের কান্না থামিয়ে রাখতে পারবেন না। মাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক দেখেন চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। সিনেমাটি প্রসঙ্গে এই নায়িকা বলেন, প্রথমবার আমার কোনো সিনেমা মাকে নিয়ে দেখলাম। খুবই ইমোশনাল হয়ে গেছি। একটি সিনেমা দেখে বের হয়ে এমনটা অনুভব কখনো হয়নি। দেশের জনপ্রিয় গায়ক ইমরান মাহমুদুল দেখতে যান ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। সিনেমাটি দেখে তিনি বলেন, শেষ দৃশ্যের পর অনেক ইমোশনাল হয়ে গেছি। অনেক কিছু আরও বিস্তারিত জানলাম। আমার মনে হয় সবার সিনেমাটা দেখা উচিত। তাহলে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। কণ্ঠশিল্পী কনা বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু পেলাম। পুরো সিনেমার মতো হয়েছে। যেখানে হাসি-ঠাট্টা, বেদনা রয়েছে। আর আবহ সংগীত বেশ দারুণ লেগেছে। আর শেষ দৃশ্য দেখে আমি কান্না ধরে রাখতে পারিনি। এটুকুই বলব।
শুক্রবার প্রথম দিনের প্রথম শো প্রেক্ষাগৃহে বসে দেখেছেন চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরী। অভিনেতা রওনক হাসানসহ অনেকেই সিনেমাটির জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক নিয়ে তারকাদের উচ্ছ্বাস: এদিকে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দেশের তারকারা। নিজেদের ফেসবুক পোস্টে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার পাশাপাশি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমাটি দেখার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন বঙ্গবন্ধুর বাবার চরিত্রে। সবাইকে সিনেমাটি দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি শুটিংয়ের সময়ে তোলা একটি ছবি পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। ওই ছবিতে চঞ্চলের সঙ্গে সিনেমায় বঙ্গবন্ধু হওয়া অভিনেতা আরিফিন শুভ এবং বঙ্গবন্ধুর স্ত্রীর চরিত্রের অভিনেত্রী দীঘিও রয়েছেন। সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুন নেছা মুজিবের বড় বেলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। তিনি বর্তমানে ‘বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র’ উৎসবে অংশ নিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় আছেন। তিশাও সিনেমাটি সবাইকে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ফেসবুকে লিখেছেন, দেশে থাকলে আজকেই দেখতে যেতাম। ‘বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র’ উৎসব থেকে তিশার এই কাজের জন্য শুভকামনা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন তার স্বামী, নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও।
আরও পড়ুন: জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের সময় জানালেন ইসি আনিছুর রহমান
লিখেছেন, ‘তিশার যে কোনো কাজের দিকেই আমার একটা চোখ এমনিতেই হেলানো থাকে। এখানেও আছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমাদের কাছের অনেক মানুষজন। সবার জন্য শুভকামনা। সিনেমাটিতে অভিনয় করতে পারা নিজের শিল্পী জীবনের বড় অর্জন বলে মনে করছেন অভিনেত্রী সাবিলা নূর। ফেসবুকে সিনেমাটির পোস্টার শেয়ার করে সাবিলা নূর লেখেন, ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রে যুক্ত হতে পেরেছি, এটাই আমার ক্যারিয়ারের অনেক বড় একটা অর্জন। সিনেমায় খন্দকার মুশতাকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন—‘এটি শুধুমাত্র একটি চলচ্চিত্র নয়, এটি একটি ইতিহাস। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমাদের নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও বাঙালির স্বাধিকারের ইতিহাস। চিত্রনায়িকা অরুণা বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের একজন সদস্য হিসেবে শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটি দেখেছি। সিনেমাটি দেখে মুগ্ধ না হওয়ার কোনো উপায় নেই। আমার চোখে জল চলে এসেছিল। বারবার চোখ মুছেছি। যখন পর্দায় শুভকে জাতির পিতার চরিত্রে দেখতে পাই, একটি অন্যরকম আবেগ কাজ করে। প্রতিটি চরিত্রই আসলে জীবন্ত হয়ে ধরা দেবে দর্শকের কাছে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যরা যেমন গুরুত্ব নিয়ে এ সিনেমায় হাজির হয়েছেন, তেমনি আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস ও সেই সময়কার ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোও দারুণভাবে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, এমন একটি সিনেমা আরও আগে নির্মাণের দরকার ছিল। জাতি তাহলে বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরও অনেক বেশি চর্চা হতো। যারা এই সিনেমা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ।
বৃহস্পতিবারই বিশেষ প্রদর্শনী দেখেছেন অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা। তিনি সিনেমাটি দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘অসাধারণ অনুভূতি একজন বাংলাদেশি হিসেবে। আমাদের অভিনেতারা সবাই কত কষ্ট করেছেন, সেটা পর্দায় প্রকাশ পাচ্ছে। আরিফিন শুভ কত কষ্ট করেছেন আপনি। তিশা আপু আহা, কি মায়া। দীঘি কি যে সুন্দর লেগেছে তোকে, তার সঙ্গে মায়াময় অভিনয়। নুসরাত ফারিয়া, তোকে নিয়ে কি বলি বল তো, বন্ধু হিসেবে আমি আজকে এত এত প্রাউড ফিল করছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর চরিত্রে আমার বন্ধু, আমাদের নুসরাত ফারিয়া।’এদিকে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ মুক্তির প্রথম দিনেই দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করছেন দর্শক। তাদের অনেকে সিনেমাটি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার পাশাপাশি পর্দায় বঙ্গবন্ধুকে দেখে এবং সিনেমার শেষ দৃশ্য দেখে কান্না করেন অনেকে। যশোরের মণিহার সিনেমা হলে প্রদর্শনী ফি ছাড়াই বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ দেখার সুযোগ মিলছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের। গতকাল সিনেমাটির মুক্তির দিনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সিনেমাকে ঘিরে দর্শক সিনেমা হলমুখী হওয়ায় আশাবাদী হয়ে উঠেছে মণিহার কর্তৃপক্ষ। আগামী কয়েকদিন এভাবেই দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমাটির আরও অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিয়াজ আহমেদ, দিলারা জামান, চঞ্চল চৌধুরী, সিয়াম আহমেদ, জায়েদ খান, খায়রুল আলম সবুজ, ফেরদৌস আহমেদ, দীঘি, রাইসুল ইসলাম আসাদ, গাজী রাকায়েত, তৌকীর আহমেদ, মিশা সওদাগরসহ দেশের শতাধিক শিল্পী। সিনেমাটির চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন অতুল তিওয়ারি ও শামা জাইদি। এতে অ্যাকশন ডিরেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন ম্যাম কৌশল, মিউজিকে ছিলেন সান্তনু মৈত্র। চলচ্চিত্রের পোশাক পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন পিয়া বেনেগাল। নির্মাতার প্রত্যাশা, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এবং দর্শকদের কাছে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে আনকাট সেন্সর পাওয়া এ সিনেমাটি। ভারতে সিনেমাটি মুক্তি পাবে আগামী ২৭ অক্টোবর।