জাতীয়

জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করলে আ’লীগ হবে মুসলিম লীগ

Is Jennifer Aniston currently in a relationship?

দীর্ঘ ১০ বছর পর জামায়াতে ইসলামীকে রাজধানীতে সমাবেশ করতে দেওয়ার নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্র কলকাঠি নাড়ছে বলে মনে করেন বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

তাঁর মতে, সরকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসক্রিপশনে জামায়াতকে রাজনীতি করতে সুযোগ দিয়েছে। এটি দেশের জন্য বুমেরাং হবে। দলটিকে নিষিদ্ধ করা না হলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না।

আগামী নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে জামায়াতের কোনো ধরনের আঁতাত হলে আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ থাকবে না; মুসলিম লীগ হয়ে যাবে। গতকাল রোববার সমকালকে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবু সালেহ রনি।

প্রায় সাড়ে ১০ বছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে রাজধানীতে সমাবেশ করেছে একাত্তরের গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

শাহরিয়ার কবির: এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যে দলকে হাইকোর্টের রায়ে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে, অর্থাৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে যার নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে, যার গঠনতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, যাদের গণতন্ত্রের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা নেই, যারা নারী-পুরুষের সমানাধিকারে বিশ্বাসী নয়, যারা মুসলিম-অমুসলিমের সমানাধিকারে বিশ্বাস করে না, যারা বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে আগুন সন্ত্রাস করে দেশের অসংখ্য মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, যারা দেশে যাবতীয় জঙ্গির পৃষ্ঠপোষক, যারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে যুক্ত, সেই দলটিকে কেন সরকার হঠাৎ সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে– এটা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। আমরা মনে করি, জামায়াত মাঠে নেমেছে

আগামী নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসক্রিপশনে তাদের মাঠে নামার সুযোগ করে দিয়েছে হয়তো। কিন্তু আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন, যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে গিয়ে অতীতে যারাই
যা কিছু করেছে, তা বুমেরাং হয়েছে। একটা বিখ্যাত উক্তি প্রচলিত রয়েছে– যুক্তরাষ্ট্র যার বন্ধু, তার শত্রুর দরকার হয় না।

আরো পুড়ুনঃ  ঢাকায় ৩৮৩ জন যাত্রী নিয়ে দুর্ঘটনার কবলে বোয়িং উড়োজাহাজ, রানওয়ে থেকে ছিটকে ঘাসের দিকে

আপনি কি মনে করেন সরকার যুক্তরাষ্টের চাপে রয়েছে?

শাহরিয়ার কবির: এখন সরকার যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পড়েছে কিনা, সেটা জানা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট মনে করে, জামায়াত একটি মডারেট ইসলামিক পার্টি। তাই তাদের পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিটি থাকতে হবে। এ নিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আমার বহুবার আলাপ হয়েছে। আমি তাদের তথ্যপ্রমাণ দিয়ে বুঝিয়েছি, দেখিয়েছি জামায়াত সন্ত্রাসী দল। তারা একাত্তরে গণহত্যায় জড়িত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে তাদের আইনপ্রণেতারা জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য প্রস্তাবও জমা দিয়েছিল। কিন্তু আমরা কয়েক মাস আগে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক বিবৃতিতে দেখেছি এর উল্টোটা। তারা জামায়াতের রাজনীতির পক্ষে সাফাই গেয়েছে। তখন বিবৃতি নিয়ে আমার প্রতিবাদ করেছি। এখন সরকার যদি স্টেট ডিপার্টমেন্টের পরামর্শে জামায়াতকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়ে থাকে, সেটা আমাদের জন্য আত্মঘাতী। শুধু তাই নয়, এটি আগামী নির্বাচন, গণতন্ত্রসহ আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করে দেবে। জামায়াতকে কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেওয়া উচিত নয়। দলটিকে নিষিদ্ধ করা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না।

ফলো করুন-
সমকাল: ২০১৩ সালে হাইকোর্টের এক রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। এর পর দলটি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলেও এখনও তার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। এর মধ্যেই জামায়াতের রাজনীতিতে ফেরা কীসের ইঙ্গিত বহন করে?

শাহরিয়ার কবির: জামায়াতের রাজনীতি উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপন্থি। যতক্ষণ আপিল নিষ্পত্তি না হবে, ততক্ষণ দলটিকে রাজনীতি করতে দেওয়া ঠিক হবে না। আপিল নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায় এখনও বহাল আছে। আর জামায়াতের সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার হাজারো প্রমাণ সরকার, গোয়েন্দা বিভাগ এবং থানা ও আদালতসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আছে। আমাদের কাছেও আছে। জামায়াত কীভাবে জঙ্গিদের লালনপালন করে, আন্তর্জাতিকভাবে দলটি কীভাবে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত তার তথ্য-উপাত্ত আছে। সেখানে নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়াটা দুঃখজনক। দলটির রাজনীতি করার অর্থ হলো, তাদের অপরাধকে বৈধতা দেওয়া।

আরো পুড়ুনঃ  সংলাপে বসবে সরকার, তবে...

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের বিচার এবং রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের কথা জানিয়েছেন। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

শাহরিয়ার কবির: আইনমন্ত্রী ২০১৪ সাল থেকে এমন বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই দেখছি না। ভাঙা রেকর্ড মন্ত্রী ক্রমাগত বাজিয়ে চলেছেন। মন্ত্রী বলেছেন, ছোট একটি সংশোধনী লাগবে। আমরা বহুবার বলেছি, সংশোধনী না করেও ট্রাইবুন্যালের বিচারকরা রায়ের মাধ্যেম তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জামায়াতের বিচার করতে পারে। কারণ জামার্নির নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালসহ বিভিন্ন রায়ে এমনটা আমরা দেখেছি। সেখানে ট্রাইবুন্যল রায়ে বলেছেন, তারা গণহত্যায় জড়িত। তাদের এই অপরাধ ছিল। যার ভিত্তিতে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। নুরেমবার্গ ট্রাইবুন্যালের রায় অনুযায়ী, নাৎসি পার্টিসহ ৪টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের রাজনীতি এভাবে নিষিদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দেশে আইনমন্ত্রী আইন সংশোধনের কথা বলে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টি ঝুলিয়ে দিয়েছেন। কেন, কী কারণে এগুলো হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না।

রাজধানীতে জামায়াতের সমাবেশ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। আপনি কী মনে করেন?

শাহরিয়ার কবির: এটি আইনমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন। আমার মনে হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ রয়েছে।

আইনমন্ত্রী বলছেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন রায়ে জামায়াতের গণহত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের তথ্য-প্রমাণ এসেছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আদালতের রায়ে দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ না হবে বা দোষী সাব্যস্ত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দলটিকে দোষী বলা যাবে না।’ আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?

শাহরিয়ার কবির: আদালতের বহু রায়ে ১৯৭১ সালের জামায়াতের অপরাধের বর্ণনা উঠে এসেছে। জামায়াতের বিরুদ্ধে ট্রাইবুন্যালের তদন্ত সংস্থাও প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছে। আইনমন্ত্রীর সঙ্গেও বিভিন্ন সময় জামায়াতের অপরাধ এবং দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে আমার কথা হয়েছে। আইনমন্ত্রী নিজেও অনেক বিষয়ের অবতারণা করেছেন। সেখানে আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্য পরিষ্কার হচ্ছে না।

আরো পুড়ুনঃ  আগামী নির্বাচনের সময় জানালেন সিইসি

জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং দলটির গণহত্যার বিচারের সামগ্রিকভাবে কি সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে?

শাহরিয়ার কবির: সরকারের ব্যর্থতা তো অবশ্যই রয়েছে। এখন সরকার যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসক্রিপশনে জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নমনীয় হয়, তাহলে এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসক্রিপশনে তাদের খুশি করতেই সরকার এসব করছে বলেই মনে হচ্ছে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, আগামী নির্বাচন ইস্যুতে জামায়াতের সঙ্গে সরকারের আঁতাত রয়েছে। আপনার কী মনে হয়?

শাহরিয়ার কবির: এটি হলে আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ থাকবে না। মুসলিম লীগ হয়ে যাবে। এমন কথা প্রয়াত আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীও বহু আগে বলেছেন। এর জন্য মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতি যুদ্ধ করেনি, ৩০ লাখ শহীদ রক্ত দেয়নি, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করেননি।

বাংলাদেশ কি আগামী নির্বাচন ইস্যুতে বহির্বিশ্বের ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে?

শাহরিয়ার কবির: যুক্তরাষ্ট্রের চাপ তো দৃশ্যমান। কয়েক মাস যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতি দিয়ে জামায়াতের রাজনীতিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিল। এখন তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়াটা তারই ইঙ্গিত বহন করে।

জামায়াতের বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

শাহরিয়ার কবির: জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা ছাড়া আগামী নির্বাচন কোনোভাবেই নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ হবে না। জামায়াত দেশে একটা গৃহযুদ্ধ বাধানোর ষড়যন্ত্র করছে, আফগানিস্তানে যেটা হয়েছে। জামায়াত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। এখন বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আওয়ামী লীগও যদি বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়, তাহলে আমরা আর কী করতে পারি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker