ছেরায় ধইর‍্যা রাহে, বউয়ে পিডায়

সারাবাংলা: ‘আমারে কয় ঘর থাইক্যা যাইতামগা, এই বয়সে আমি কই যাইয়াম। এই কথা কইলেই আমারে বহে (বকা) ও লাডি দিয়া পিডায়। এইডা দেইখ্যা বউয়েও চুলের মুডি ধইর‌্য লাথি কিল ঘুষি দেয়। আর অহন তো ছেড়ায় ধইর‌্যা রাহে আর বউয়ে পিডায়, আমি অহন কই যাইয়াম-কার কাছে বিচার চাইয়াম?’

এমন ঘটনা ছাড়াও বসতঘরের জমি লিখে না দেওয়ায ছেলের অত্যাচারের পর মারপিটের শিকার হয়ে বৃদ্ধা মা এখন বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর প্রাণ নাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে তাকে। এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌর সভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দশালিয়া মহল্লায়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নির্যাতনের শিকার মা হচ্ছেন ওই মহল্লার মৃত শাহনেওয়াজের স্ত্রী হালিমা খাতুন (৬০)। বৃদ্ধা হালিমা খাতুন জানান, তার এক মাত্র ছেলে মো. রুকন মিয়া ও তার স্ত্রী শরিফা আক্তার (৩০) তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে প্রায়ই তার সাথে বিবাদে জড়ান। তাছাড়া বসতঘরের অংশ লিখে না দেওয়ায় তারা প্রায়ই গালাগাল করে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত করে আসছেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে পুত্রবধূ শরিফা তার স্বামীর কাছে নালিস করলে স্বামী কিছু যাচাই না করেই স্ত্রীর কথায় তার মা হালিমা খাতুনকে মারধর করেন।

তিনি আরো জানান, প্রথমে লোক-লজ্জার ভয়ে ছেলের মারপিটের কথা কাউকে কিছু না বললেও গত এক সপ্তাহ ধরে ছেলে ও ছেলের বউ মিলে ব্যাপকভাবে মারপিট করে আসছেন। এ অবস্থায় তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাও নিয়েছেন। ঘটনাটি স্থানীয় লোকজনকে জানালেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু গত তিন দিনেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়ায় আজ শুক্রবারও সকালে তাকে মারপিট করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় কাউন্সিলরকে সাথে নিয়ে বৃদ্ধা মা হালিমা খাতুন আসেন এ প্রতিনিধির কাছে। চাপা কান্নায় তখন বলেন, ‘ছেড়া ও তার বউ মিইল্যা মারে এই শরম কই রাহি। মনডায় চায় নিজের জীবন শেষ কইর‌্যা দেই।

আপনেরা বিচার কইর‌্যা দেইন। আমি এরার বিচার চাই।’ ওই সময় আবার ডুকরে কেঁদে নিজের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারপিটের চিহ্ন দেখান তিনি।
স্থানীয় কাউন্সিলর খায়রুর ইসলাম মানিক জানান, মাকে মারধরের ঘটনায় তিনি বেশ কয়েকবার অভিযুক্ত ছেলেকে শাসিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। এ অবস্থায় তিনি ওই বৃদ্ধ মাকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এ ব্যাপারে নান্দাইল থানার উপ-পরিদর্শক মো. হারুন-অর রশিদ লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, একবার তিনি ঘটনাস্থলে গেলেও অভিযুক্ত ছেলেকে পাননি। তাছাড়া এলাকার কয়েকজন ফয়সালার কথা বলায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।