জাতীয়

ছবি নয়,‌ শুধু ফিঙ্গারে জাতীয় পরিচয়পত্র চায় মহিলা আনজুমান

Is Jennifer Aniston currently in a relationship?

শুধু মুখের ছবি নেওয়ার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) আসতে আগ্রহী নয় অনেক নারী। কিন্তু এনআইডি ছাড়া একজন নাগরিক ২২ ধরনের রাষ্ট্রীয় সেবা নিতে পারেন না।

তাই মুখের ছবি না নিয়ে শুধু ফিঙ্গারপ্রিন্টের ভিত্তিতে পর্দানশীন নারীদের জন্য এনআইডি দেওয়ার ব্যবস্থা রাখার দাবি জানিয়েছে মহিলা আনজুমান দরবার শরীফ রাজারবাগ।

সোমবার (১৯ জুন) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সম্মেলনে এসব দাবি জানান মহিলা আনজুমানের মুখপাত্র শারমিন ইয়াসমিন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রস্তাবিত ‘পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০২৩’-এ যেন এনআইডির জন্য মুখচ্ছবি বাধ্যতামূলক না‌ করা, শুধু এনআইডি নয়, রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে যেমন অফিস-আদালত, কলকারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা পরীক্ষার হলে অপরাধ, দুর্নীতি ও প্রক্সি রুখতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে শনাক্তকরণ/হাজিরা চালু করা,‌ প্রয়োজনে কোন নারীর চেহারা দেখাসহ কোন সহযোগিতা যদি প্রয়োজন হয়, তবে পৃথক স্থানে নারী দিয়েই নারীর সহযোগিতার ব্যবস্থা করাসহ ছয় দফা দাবি জানান।

যে ৬ দফা দাবি জানায় মহিলা আনজুমান

১. পর্দানশীন নারীদের রাষ্ট্রীয় নিবন্ধনে আসতে চাওয়া জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ইতিবাচক

শুধুমাত্র মুখচ্ছবি দিতে সম্মতি না দেওয়ায় এনআইডি বঞ্চিত হয়ে আছেন অসংখ্য পর্দানশীন নারী, যারা সরকারের নিবন্ধনের আওতার সম্পূর্ণ বাইরে। অথচ সরকারি ডাটাবেজে সকল নাগরিকের নিবন্ধন থাকা জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু পর্দানশীন নারীরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে সরকারি নিবন্ধনের আওতায় আসতে ইচ্ছুক তাই ছবি বাধ্যতামূলক না করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডাটা নিয়েই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে তাদের সাদরে জাতীয় নিবন্ধনের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া।

২. পরিচয় যাচাইয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট অনেক বেশি জননিরাপত্তাবান্ধব ও দুর্নীতিরোধক

বর্তমানে এনআইডিতে ব্যক্তির একটি মুখচ্ছবি থাকে, যার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ। প্রথমত অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছবির সঙ্গে বাস্তব চেহারার অনেক অমিল থাকে। ফলে ছবি দেখে যাচাইয়ে বেশ বেগ পেতে হয়। দ্বিতীয়ত দুই ব্যক্তির চেহারার মিলকে কাজে লাগিয়ে একজনের এনআইডি অন্যজন ব্যবহার করে বহুবিধ অপরাধ করে। আবার মুখচ্ছবি দেখে যাচাই পদ্ধতিকে পুঁজি করে ক্ষণস্থায়ী, গলাকাটা ও ভুয়া এনআইডি ব্যবহারও বাড়ছে।

এসব কারণে বর্তমানে শুধুমাত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করেই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এনআইডি নির্ভুলভাবে শনাক্ত করা হচ্ছে, যেখানে মুখচ্ছবির কোন ব্যবহার নেই। যেমন- দ্বৈত ভোটার যাচাই, রোহিঙ্গা যাচাই, ইভিএমে ভোট দেওয়া, সিমকার্ড নিবন্ধন ইত্যাদি। অর্থাৎ ফিঙ্গারপ্রিন্টের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা সর্বজন স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য। এ কারণে শুধু জাতীয় পরিচয় সনাক্তকরণেই ফিঙ্গারপ্রিন্টের ব্যবহার যথেষ্ট নয়, বরং রাষ্ট্রের সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফিঙ্গারপ্রিন্টের বহুল ব্যবহার চালু করা এখন সময়ের দাবি।

আরো পুড়ুনঃ  এবার ফেসবুক লাইভে সার্টিফিকেট পোড়ালেন ঢাকা কলেজের ছাত্র

বিশেষ করে, একজনের হাজিরা অন্যজন দিয়ে দেওয়া, চেহারা মিল থাকায় পরীক্ষার হলে প্রক্সি দেয়া, একজনের ত্রাণ অন্যজন চুরি করা, স্কুলে বাচ্চাদের দুপুরের খাবার আরেকজন খেয়ে নেওয়া, আসল ডাক্তারের সঙ্গে চেহারার মিলকে কাজে লাগিয়ে তার এমডিসি নম্বর ব্যবহার করে ভুয়া ডাক্তারি করার মতো বহুবিধ দুর্নীতি ও অপরাধ বর্তমানে অহরহ হচ্ছে, যা রুখতে একমাত্র সমাধান হচ্ছে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে রিয়েল-টাইম শনাক্ত করা।

যেহেতু পর্দানশীন নারীরা সঠিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট পদ্ধতিই বেছে নিয়েছেন, তাই অযথা মুখচ্ছবিকে বাধ্যতামূলক করে তাদেরকে এনআইডি বঞ্চিত করে রাখার কোন যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না।

৩. মানবাধিকার লঙ্ঘন

শুধুমাত্র মুখচ্ছবি দিতে সম্মতি না দেওয়ায় নারীদের এনআইডি থেকে বঞ্চিত করে রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন, বর্তমানে রাষ্ট্রের ২২টি মৌলিক ও নাগরিক অধিকার পেতে এনআইডির প্রয়োজন। শুধুমাত্র মুখচ্ছবি দিতে সম্মতি না দেওয়ায় লাখ লাখ নারীকে এনআইডি থেকে বঞ্চিত করে তাদের ২২টি মৌলিক ও নাগরিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

৪. ঠিক কত সংখ্যক নারী এনআইডি বঞ্চিত ?

আরো পুড়ুনঃ  হজে হারিয়ে গিয়েছিলেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী, ৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার

ঠিক কত সংখ্যক নারী এনআইডি থেকে বঞ্চিত তার সঠিক হিসেব পাওয়া যায়নি। তবে এনআইডি প্রাপ্তির আগের ধাপ হচ্ছে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া। ২০০৮ সালে ভোটার তালিকায় পুরুষের থেকে নারীর সংখ্যা ১৪ লাখ বেশি ছিল। কিন্তু ২০২৩ এ এসে নারীর সংখ্যা পুরুষের থেকে ১৭ লাখ কমে গেছে। অথচ বর্তমান জনশুমারিতে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি।

ইসি নিজেও স্বীকার করেছে- ধর্মীয় কারণে ছবি তুলতে না চাওয়ায় ভোটার তালিকায় নারীর অন্তর্ভুক্তি কম। ফলে তারা এনআইডিও পাচ্ছেন না। নারী-পুরুষের বিশাল এ পার্থক্য দেশে ভয়াবহ ‘জেন্ডার গ্যাপ বা লিঙ্গ বৈষম্য’ নির্দেশ করে, যা নারীর অগ্রযাত্রায় বড় ধরনের বাধা।

৫. ব্যর্থতার দায় ইলেকশন কমিশনের

বিপুল সংখ্যক নারীকে এনআইডি’র আওতায় না আনতে পারার ব্যর্থতার দায় ইলেকশন কমিশনের। বিষয়টি সমাধানে উদ্যোগী হয়নি ইসি, বরং প্রতিনিয়ত উপেক্ষা করে গেছে। এনআইডির ক্ষেত্রে পর্দানশীন নারীদের কেন উপেক্ষা করা হলো, তা সত্যিই আশ্চর্যজনক। তাছাড়া ছবিবিহীন এনআইডি অনেক দেশেই স্বীকৃত। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আমিশ ও মেনোনাইট উপদলটি প্রাণীর ছবি তোলাকে ধর্মবিরোধী বলে বিশ্বাস করে। সেই বিশ্বাস থেকে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিল ছবিবিহীন এনআইডি কার্ডের জন্য।

২০১৯ সালে ভার্জিনিয়া সরকার তাদের দাবি পূরণ করে ছবিবিহীন এনআইডির সুযোগ করে দেয়। পাকিস্তানও নারীদের প্রাইভেসির কারণে ২০০৭ সালে এনআইডি কার্ডে নারীদের ছবি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়। কানাডার ব্রিটিশ কলোম্বিয়া রাজ্যেও ছবিবিহীন এনআইডি কার্ডের প্রচলন আছে।

৬. আশাবাদী মহিলা আনজুমান

যেহেতু এনআইডির দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে যাচ্ছে, তাই মহিলা আনজুমান আশাবাদী যে- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্দানশীন নারীদের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে এবং তাদের ধর্মীয় অধিকার অক্ষুণ্ন রেখেই এনআইডি সুবিধা প্রদান করবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker