এক্সক্লুসিভ

চলন্ত ট্রেনের কোচ মুহূর্তে হয়ে উঠল অপারেশন থিয়েটার

Is Jennifer Aniston currently in a relationship?

ছবিতে ডা: মো: সানাউল্লাহ ইমরান সানা সাহেবকে প্রেসক্রিপশন লিখতে দেখা যাচ্ছে। যার বাড়ি দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ২নং ভেড়ভেড়ি ইউনিয়নের তেবাড়িয়া চৌধুরীপাড়ায়।। উনার পাশে সব মানবতার ফেরিওয়ালা।। ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং এ আন্তঃনগর চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে (৮০৫ চিলাহাটি গামী) বরাবরের মতোই পিছন থেকে টিকিট চেকিং শুরু করি। সাথে ছিল জনাব বেলাল হোসেন,টিটিই/ পার্বতীপুর।
সকাল থেকেই মনটা আজ খুব ভালো ছিল। অনেকদিন পর রেল ভবনে প্রিয় স্যারের সাথে দেখা হয়েছে। প্রায় ৩৪ মিনিট স্যারের সাথে আলাপ আলোচনা হল। অনেক অজানা বিষয়ে, অনেক কনফিউশন মন থেকে দূর করে দিলেন। যথারীতি আমরা টিকিট চেক করতে করতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। ‘জ’ কোচে আসার পর হঠাৎ করে এক ভদ্রলোক (জনাব শাহিন আলম,নামটা পরে জেনেছি)আমাকে জানালো যে, ‘ঘ’ কোচের একটি রোগীর সমস্যা হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সাথে সাথে আমার পেছনের গার্ড সাহেব জনাব সিফাত হোসেন কে আমি জানালাম যে, দ্রুত পিএ অপারেটরকে এনাউন্সমেন্ট করতে বলেন,যে জরুরী ভিত্তিতে ‘ঘ’ কোচের একজন ডাক্তার প্রয়োজন। সিফাত ভাই দ্রুত মাইকিং এর ব্যবস্থা করলেন। একজন ডাক্তার ‘জ’ কোচ থেকে দ্রুত সামনের দিকে এগুতে দেখলাম। ‘চ’ কোচ থেকে একজন ৫ম বর্ষের শিক্ষানবীশ মহিলা ডাক্তার, দুজন নার্স পাওয়া গেল। সবাই দ্রুত ‘ঘ’ কোচের দিকে গেলেন।
ডাক্তার সাহেব রোগীর ব্লিডিং দেখে জরুরী ভাবে হাসপাতালে নেবার কথা বললেন।
আমি পেছনে গার্ড সাহেবের সাথে কথা বলতে শুরু করলাম, দ্রুত ৯৯৯ এ কল দিলেন এক যাত্রী। টাঙ্গাইল স্টেশনে ট্রেন থামানো হবে। ভাগ্য আমাদের ভালো চিলাহাটি এক্সপ্রেসের ক্রচিং পড়েছে এখানে। ৯৯৯ আমাদের অ্যাম্বুলেন্স এর নম্বর দিলেন। অ্যাম্বুলেন্স এর সাথে কথা হলো উনারাও রেডি।
এদিকে মহিলা যাত্রী সন্তান সম্ভবা ছিলেন। কিন্তু ট্রেনেই উনার রক্তপাত শুরু হয়। চার মাসের বাচ্চাটা গর্ভেই মারা যায়। মহিলা ডাক্তার, নার্সরা ডাক্তার সাহেবের পরামর্শ মেনে কাজ করে যাচ্ছিলেন। ‘ঘ’ কোচের মহিলা যাত্রীরা কাপড় দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন পুরো জায়গাটা। তিন সিটের চেয়ারের সারিটা সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল অপারেশন থিয়েটার।

আরো পুড়ুনঃ  পাপিয়া-কাণ্ড: এবার কাশিমপুর মহিলা কারাগারের জেল সুপার বদলি

স্বামী বেচারা বোকার মতো এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলেন। বেচারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছেন। একজন যাত্রী জানালেন উনার পকেটে মাত্র ১২০০ টাকার মতো আছে। তৎক্ষণাৎ সব যাত্রীরা যে যার মতো ফান্ড সংগ্রহ করা শুরু করলেন। প্রায় ৫ হাজারের মতো টাকা রোগীর স্বামীর হাতে তুলে দেয়া হলো। আল্লাহর অশেষ রহমতে, মহিলার মৃত বাচ্চাটিকে বের করে ফেলা হলো ডাক্তার,নার্স সহ সবার সহযোগীতায়।
সবাই কে ডাক্তার সাহেব আশ্বস্ত করলেন, রোগী এখন অনেকটা বিপদ মুক্ত। কিন্তু ব্লিডিং আটকাতে হবে। মহিলা যাত্রীর ব্যাগ থেকে কাপড় ও অন্যান্য যাবতীয় জিনিস দিয়ে সহযোগীতা করলেন সবাই। রোগীকে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। সেই স্যালাইন,হেক্সিসল,ডেটল যাত্রীরা যার কাছে যা রয়েছে, তাই দিয়ে সাহায্য করলেন। আমার চাকরি জীবনে এমন এটি চতুর্থ ঘটনা। কিন্তু সব যাত্রীদের এমন সহযোগীতা আজ অভূতপূর্ব মনে হলো। যে যার জায়গা থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো। একটি বারও রোগী ও তার স্বামীকে মনে করতে দেয়া হয় নাই যে, তারা তাদের বিপদে নিকটজনের সাথে নেই। কোচের সব যাত্রীই আজ তার আপনজন। সব কিছু যখন অনেকটা স্থিতিশীল। তখন দুশ্চিন্তা শুরু হলো আর একটি বিষয় নিয়ে। জরুরী ভিত্তিতে কিছু ওষুধ প্রয়োজন। ডাক্তার সাহেব ওষুধ লিখে দিলেন। হঠাৎ মনে পড়ে গেল মানবতার আর এক নাম ঈশ্বরদীর টিটিই জনাব আব্দুল আলীম বিশ্বাস মিঠু ভাইর কথা। আজ রাতে ঈশ্বরদীতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। তবুও তিনি প্রেসক্রিপশন পেয়ে নিজেই ওষুধের দোকানে গিয়ে সব ওষুধ কিনে রিক্সাওয়ালাকে দিয়ে ঈশ্বরদীবাইপাস কেবিন স্টেশন মাস্টারকে দিয়ে পাঠালেন। পরে ট্রেন স্টেশনে থামলে ওষুধ নিয়ে ডাক্তার সাহেবের হাতে পৌছে দেয়া হয়। তরুণ এই ডাক্তার সাহেব অনেকবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। পুরো রেলওয়েকে উনি অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানালেন। মনে মনে ভাবছি,প্রিয় স্যারের একটি কথা,যা সদ্যই তাঁর মুখ থেকে শুনে আসলাম। টিটিইদের কাজের অনেক প্রভাব পড়ে যাত্রীদের উপর। সেটা মন্দ কাজই হোক,কিংবা ভালো কাজ। এরই মাঝে আমার ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ পাকশীর এসিও জনাব ফারহান মাহমুদ স্যারকে সমস্ত বিষয়টি অবগত করে রাখলাম।পথে যদি রোগীর অবস্থা শঙ্কটাপন্ন হয় তাহলে যেন জরুরী যে কোন পদক্ষেপ নিতে পারি এবং গৃহিত সব পদক্ষেপ সম্পর্কে তাকে জানিয়ে রাখলাম। তিনি কোন রকম সমস্যায় পড়লে যোগাযোগ করার জন্য আশ্বস্ত করলেন।
এত দ্রুত এমন ভাবে একটি মায়ের জীবন
বাঁচানোর জন্য যাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ,
তারা হলেন—
১) ডা.সানাউল্লাহ,ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল,ঢাকা।( যিনি সারাটা রাত, সারাটা পথ রোগীর পাশে বসে ছিলেন। এই তরুণ ডাক্তার একদিন অনেক নামকরা ডাক্তার হবেন মনে হচ্ছে।)
২) ডা. আফসানা ইসলাম রোজা, স্টুডেন্ট ৫ম বর্ষ,রংপুর কমিউনিটি হাসপাতাল।
৩) মোসাঃ ফারজানা আক্তার (নার্স)
৪) মোসা: মুন্নি খাতুন (স্টাফ নার্স ওটি)
৫) রেবেকা সুলতানা (নার্সিং ইন্সট্রাকটর)
৬) খাদিজা খাতুন নিশা (নার্সিং ইন্সট্রাকটর)
৭) রুমি ইসলাম ( নার্সিং ইন্সট্রাকটর)
৮) আব্দুল আলিম মিঠু, টিটিই ঈশ্বরদী।
বিউটিফুল দিনাজপুর পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য দোয়া রইলো।। আপনারা এমন করেই মানবতার হাত বাড়িয়ে দিবেন সব সময় সব জায়গায় এমনটাই প্রত্যাশা।।
ছবি ও লেখা: আমিরুল হক জাহেদী
©বিউটিফুল দিনাজপুর

আরো পুড়ুনঃ  বিয়ের ৩ দিন পর স্বামীকে হত্যার অভিযোগ স্ত্রীর বিরুদ্ধে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker