ওবায়দুল কাদের এভাবে কেন ‘শব্দ বোমা’ ফাটাচ্ছেন

রাজনীতি: ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি তিনি। টানা তিন বার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। কিন্তু ইদানিং তার কথাবার্তা নিয়ে সব মহলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। শুধু আলোচনা নয়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও গোপনে গোপনে তার কথাবার্তায় বিব্রত। অনেকেই বলছেন যে ওবায়দুল কাদেরকে সামাল দিবে কে? তাকে সামাল না দিলে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। তবে ওবায়দুল কাদের এসবকে পাত্তা দিচ্ছেন না। তিনি গত কিছুদিন ধরে একের পর এক মন্তব্য করছেন, যে সমস্ত মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল হচ্ছে। নানামুখী আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, সরকার বিব্রত হচ্ছে। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হচ্ছে বিরক্ত।

কেন ওবায়দুল কাদের এ ধরনের কথা বলছেন তা নিয়ে বিভিন্ন মুখী আলোচনা চলছে। ওবায়দুল কাদের সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার পরেই বলেছেন, ‘দুই সেলফিতে ফয়সালা হয়ে গেছে।’ তার এই বক্তব্য দেওয়া হয় এমন এক সময় যে সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করে। শুধু তাই নয়, এর পরপরই তিনি একটি একটি শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘তলে তলে আপস হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: ভোটাররা নির্বাচনে আসলেই বড় সফলতা অর্জিত হবে : সিইসি

দিল্লি আছে, আমেরিকার দিল্লিকে দরকার আছে, নির্বাচন হবে।’ তার এই বক্তব্য যেন শব্দ বোমার মতো বিস্ফোরিত হয় এবং এই নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা, সমালোচনা হয়। পরবর্তীতে তিনি এর একটি ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন যে, তলে তলে বা খেলা হবে এই সমস্ত শব্দগুলো পাবলিক খায় খায় জন্যই তিনি এটি বলেছেন। তবে তার এই বক্তব্য আওয়ামী লীগকে একটি বিব্রত কর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে।

গতকাল তিনি আরেক শব্দ বোমা ফাটিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘পিটার হাসের মুরুব্বীদের সাথে কথা হয়ে গেছে।’ কেন এরকম স্পর্শকাতর সময় ওবায়দুল কাদের এই ধরনের কথাবার্তা বলছেন তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন তিনি বিরোধী দলের আক্রমণের জবাব দেওয়ার জন্যই পাল্টা আক্রমণ হিসেবে এ ধরনের কথা বলছেন। রাজনীতিতে এখন অনেকটাই মার্কিন নির্ভর। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে পদক্ষেপ গুলো নিচ্ছে তার ফলে বিএনপি লাভবান হচ্ছে এটা একটি সাধারণ রাজনৈতিক সমীকরণ। আর এ কারণেই তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেকে ইঙ্গিত করে নানা রকম কথা বলছেন।

গতকাল জানা গিয়েছিল যে পিটার হাসের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠক হওয়ার খবরের প্রেক্ষিতেই ওবায়দুল কাদের ওই মন্তব্য করেছিলেন বলে জানা গেছে। তবে রাজনীতির মাঠে এই ধরনের বক্তব্য দেওয়া কতটা সমচীন সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠরা বলছেন যে, এগুলো মেঠো বক্তৃতা, মাঠের বক্তৃতায় অনেক কিছুই বলা যায়। আর এই সমস্ত বক্তৃতার ফলে কর্মীরা অনেক চাঙ্গা থাকে, উদ্দীপ্ত হয়।

আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ডিসিশন (সিদ্ধান্ত) বিশেষ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠা আছে সেটা কাটানোর জন্যই ওবায়দুল কাদের এই ধরনের আক্রমণতা কথাবার্তা বলছেন। তবে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা মনে করেন, এই সময় অন্যান্য আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে যেভাবে বক্তব্য দেওয়া উচিত ছিল যেভাবে বিএনপির সমালোচনা করা উচিত ছিল তা তারা দেন না। আর এ কারণেই ওবায়দুল কাদেরকে এই ধরনের আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিতে হয়। তবে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া এক জিনিস। আর বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়া আরেক জিনিস।

ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য গুলোর ফলে আওয়ামী লীগ সমালোচিত হচ্ছে। বক্তব্য দানের ক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদেরকে আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত এমনটি মনে করছেন অনেকে। তবে ওবায়দুল কাদের তার ঘনিষ্ঠদের বলেছেন, এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে তিনি আত্মতৃপ্তি পাচ্ছেন এবং এই বক্তব্য গুলোর ফলে বিরোধী দলের আতে ঘা লাগছে। কিন্তু রাজনীতিতে এই ধরনের বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য বিশেষ করে ইউরোনিয়াম কি তা না জেনেই কারো মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে দেওয়ার অভিপ্রায় কতটা রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করে নাকি রাজনীতিতে খেলো করে? সেটা ভেবে দেখার বিষয় বৈকি।