‘এখন বাঁচলে দুজন একসঙ্গে বাঁচবো, মরলেও একসঙ্গে মরবো’

বছর দেড়েক আগে অসুস্থতা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার হিরণপুর এলাকার বাসিন্দা জহিরুল। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানতে পারেন তার দুটো কিডনিই অকেজো। অনেক চেষ্ঠার পর যখন স্বামীর জন্য কিডনীর কোন ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না ঠিক তখনই কিডনি দিয়ে স্বামী জহিরুলের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসেন স্ত্রী সায়মা জাহান পলি (২৭)। স্ত্রীর দেয়া কিডনিতে বর্তমানে নতুন জীবন ফিরে পাচ্ছেন স্বামী জহিরুল। জহিরুল-সায়মা দম্পতির এমন বিরল ভালোবাসা এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গত শনিবার সায়মা জাহানকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হলেও এখনও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সপ্তম তলায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন জহিরুল। আগামী দু-চার দিনের মধ্যে তাকেও রিলিজ দিয়ে দেয়া হবে বলে জানান জহিরুল ইসলামের ছোট ভাই আশিকুল হক। আশিকুল বলেন, ভাবি শুধু ভাইয়াকে কিডনিই দেননি, অসুস্থ ভাইকে নিয়ে তিনিই চিকিৎসা কাজে দৌড়াদৌড়ি করেছেন। ভাবি যে কাজটি করেছেন বর্তমান সময়ে সত্যিই তা অবিশ্বাস্য। ভাবির মতো একজন নারীকে আমাদের পরিবারের বউ হিসেবে পেয়ে আমরা গর্বিত। তিনি আরও জানান, এই অবস্থার মধ্য দিয়েই তিনি রাত জেগে পড়াশোনা করে ঢাকা থেকে নেত্রকোণায় এসে পরীক্ষা দিয়ে মাস্টার্স পাস করেছেন। যা আসলে যেকোনো নারীর পক্ষে সম্ভব না। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ছয় বছর আগে আটপাড়া উপজেলার পাঁচগজ গ্রামের সায়মা জাহানের সঙ্গে জহিরুল হকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা একসঙ্গে ঢাকায় বসবাস করতেন। গত বছরের ২৭ মে জহিরুলের উচ্চ রক্তচাপসহ তার শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হলে স্বজনরা তাকে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন তার ব্লাড প্রেসার (বিপি) ৩০০ বাই ২৪০।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ময়মনসিংহে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার কিডনি রোগ ধরা পড়ে। এরপর ময়মনসিংহ ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নেন তিনি এবং সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ডায়ালাইসিস করতে থাকেন। কিন্তু শারীরিক পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছিল। এর মাসখানেক পর তার অবস্থার আবারও অবনতি হলে চিকিৎসক জানান- তার দুটি কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। তাকে বাঁচাতে হলে কমপক্ষে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন। এতে দুঃচিন্তায় পড়ে যান জহিরুলের পরিবার। একপর্যায়ে স্ত্রী সায়মা জাহানের কিডনি পরীক্ষা করলে জহিরুলের কিডনির সঙ্গে মিলে যায়। এ অবস্থায় স্বামীকে বাঁচাতে সায়মা জাহান নিজের একটি কিডনি স্বামীকে দেয়ার কথা জানান। পরে গত ৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনে অস্ত্রোপচার করা হয়। এ বিষয়ে সায়মা জাহান জানান, আমি নিজের ইচ্ছায় কিডনি দিয়েছি। তিনি সুস্থতার দিকে যাচ্ছেন এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে। স্বামীকে নিজের একটি কিডনি দিতে পেরে আমি গর্বিত। এখন বাঁচলে দুজন একসঙ্গে বাঁচবো, মরলেও একসঙ্গে মরবো। জানা গেছে, নেত্রকোণার বাসিন্দা মো. মোজাম্মেল হকের ছেলে জহিরুল ইসলাম জুনাইদ। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তার স্ত্রী সায়মা জাহান নেত্রকোণা সরকারি কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। জহিরুল ও সায়মা দম্পতির জুনাইনা জান্নাত রাইসা নামে পাঁচ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।