দেশজুড়ে

এক সম্পত্তি দিয়ে তিন ব্যাংক থেকে লোন!

Is Jennifer Aniston currently in a relationship?

রাজধানীর পল্টনে আড়াই কাঠা জমি। এর ওপর একতলা ঘর। নিজের নামে থাকা এই সম্পত্তি তিনটি ব্যাংকে বন্ধক রেখে তিনবার ঋণ তুলে নিয়েছেন এক নারী। অভিযোগ উঠেছে, এই সম্পত্তি যে অন্য ব্যাংকের কাছে গচ্ছিত রাখা হয়েছে, তা বুঝতে পারেনি কোনও ব্যাংকই। বিষয়টি একটি ব্যাংকের নজরে আসে পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখে। তাও এই তথ্য তারা জানতে পেরেছেন ঋণ দেওয়ার সাত বছর পর।

পল্টনের আড়াই কাঠার ওই জমির মালিকের নাম জান্নাত আরা ফেরদৌস। জমির ওপর একতলা ছাপরা ঘর রয়েছে কয়েকটি। এই সম্পত্তি ও এর ওপর প্রতিষ্ঠিত মেসার্স জান্নাত ট্রেডিং করপোরেশন বন্ধক রেখে ৫০ লাখ টাকা ঋণের আবেদন করেন জান্নাত আরা। ২০১৬ সালের ১৯ মে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের কাছে এই ঋণের আবেদন করা হয়।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন আই.সি.ডি শাখা তার আবেদন গ্রহণ করে ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই ৫০ লাখ টাকার ঋণ মঞ্জুর করে। পরে ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই ওই প্রতিষ্ঠানের বন্ধকী দলিল, আমমোক্তারনামা সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন করে দেয়। একই সঙ্গে ঋণ গ্রহণের জন্য ব্যাংকের সব কাজ (ডিপি নোট, ডিপি নোট ডেলিভারি লেটার, এগ্রিমেন্ট ফর ক্যাশ ক্রেডিটসহ ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্যসহ অন্যান্য পোরসোনাল গ্যারান্টি দলিল) সম্পাদন করে দিলে জান্নান আরা ফেরদৌসকে ব্যাংক ৫০ লাখ টাকা ঋণ দেয়।

পরবর্তীতে সাত বছর পর এ বছরের ২৩ মার্চ পত্রিকায় আইএফআইসি ব্যাংক ওই সম্পত্তি নিলামের একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেটি নজরে আসে সোনালি ব্যাংকের কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন আই.সি.ডি শাখার। বিজ্ঞপ্তি থেকে সোনালী ব্যাংক জানতে পারে ওই তফসিলভুক্ত সম্পত্তি জান্নাত আরা ফেরদৌস সোনালী ব্যাংকে বন্ধক রাখার আগেই আইএফআইসি ব্যাংকের কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকা এবং এনআরবি ব্যাংক থেকে ৭৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।

গত ১ জুন সোনালী ব্যাংকের কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন আই.সি.ডি শাখার ব্যবস্থাপক মো. জামিউল ইসলাম বাদী হয়ে জান্নাত ট্রেডার্সের মালিক জান্নাত আরা ফেরদৌসকে আসামি করে শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা করেন। সম্পত্তি নিলামের জন্য ব্যাংকের পক্ষ থেকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জান্নাত আরা চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার আগের লোন তো পরিশোধ করা শেষ। আর ব্যাংক কেন মামলা করেছে আমি জানি না।

মামলার বাদী জামিউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা বিজ্ঞাপন দেখে বুঝতে পারি তার নামে এই সম্পত্তি বন্ধক রেখে আরও কয়েকটা ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন তিনি। তার সঙ্গে যে চুক্তি ছিল তা ভঙ্গ করেছেন। বারবার তাকে তাগাদা দিয়েছি, কিন্তু তিনি কোনও টাকা পরিশোধ করেননি। আমরা ব্যাংকগুলো অসহায় তাদের কাছে।

ঋণ দেওয়ার সময় দলিলপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের যাচাইয়ের সুযোগ আছে। তবে উনি এমনভাবে কাজগুলো করেছেন যে আমাদের সিআইবি রিপোর্টে আসে নাই এগুলো। উনি আমাদের যে দলিলগুলো দিয়েছেন, আমরা যাচাই করেছি। সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে তখন এমন কিছু ধরা পড়েনি। আমাদের যে মূল দলিলটা দিয়েছে এমন মূল দলিল আসলে কয়টা আমরা তা বুঝতে পারিনি। সাবরেজিস্ট্রার অফিস থেকেও বললো দলিল সঠিক মনে হচ্ছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, জান্নাত আরা ফেরদৌস ‘মেসার্স জান্নাত ট্রেডিং করপোরেশন’-এর সম্পত্তির মালিক থাকা অবস্থায় মতিঝিল শাখায় ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট এবং কমার্স (আইএফআইসি) ব্যাংকে ওই সম্পত্তি বন্ধক রেখে ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ৬০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। পরবর্তীতে তথ্য গোপন করে একই সম্পত্তি বন্ধক রেখে এনআরবি ব্যাংকের গুলশানের করপোরেট হেড অফিস থেকে ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জান্নাত আরা ফেরদৌস উদ্দেশ্যমূলকভাবে ৭৫ লাখ টাকা ঋণ নেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, জান্নাত আরা ফেরদৌস একই সম্পত্তি উল্লিখিত দুটি ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে আগেই ঋণ নেওয়ার তথ্য গোপন করেছেন এবং ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই সোনালী ব্যাংক থেকে ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। প্রতারণামূলকভাবে দুটি ব্যাংকের ঋণ গ্রহণ সংক্রান্ত তথ্য গোপন করে একই সম্পত্তি সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন আই.সি.ডি শাখায় বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া ও অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে উল্লিখিত ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতিসাধন করার উদ্দেশ্যে পেনাল কোডের ৪০৬/৪১৭/৪১৮/৪২০/৪২১ ধারার তিনি অপরাধ করেছেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঋণ পরিশোধ না করলে প্রাথমিকভাবে অর্থঋণ মামলা হয়। অর্থঋণ মামলায় রায় পেলে পরবর্তীতে অর্থজারি মোকদ্দমার মাধ্যমে বন্দকী সম্পত্তি ক্রোক করা হয়। পরবর্তীতে সেই সম্পত্তি অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩-এর ৩৩ ধারা অনুযায়ী নিলামে বিক্রির মাধ্যমে ঋণের টাকা পরিশোধ করা হয়ে থাকে। মোকদ্দমা চলমান থাকা অবস্থায় মধ্যস্থতা করার সুযোগ থাকে।

আইএফআইসি ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, অর্থঋণ আদালত আইন-২০০৩-এর ৩৩-এর ৫ ধারা অনুযায়ী ঢাকার অর্থঋণ আদালত-৩, ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবরের এক আদেশে জান্নাত আরা চৌধুরী তার ওই সম্পত্তি আইএফআইসি ব্যাংকের কাছে ভোগদখল ও বিক্রির অধিকার হস্তান্তর করেন। যে কারণে ব্যাংকটি ওই সম্পত্তি নিলামের বিজ্ঞপ্তি দেয়।

অর্থ ঋণ আদালত আইন-২০০৩ এর ৩৩ এর ৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনও সম্পত্তি ২৮ এর উপ-ধারা (১), (২), (২ক), (২খ), (২গ), (৩) ও (৪) এর বিধান অনুসারে ডিক্রিকৃত দাবি পরিপূর্ণভাবে পরিশোধিত না হওয়া পর্যন্ত ওই সম্পত্তি দখল ও ভোগের অধিকারসহ ডিক্রিদারের অনুকূলে ন্যস্ত করা হবে, এবং ডিক্রিদার ২৯ এর উপ-ধারা (১), (২), (২ক), (২খ), (২গ), (৩) ও (৪) এর বিধান অনুসারে, ওই সম্পত্তি বিক্রি করে অপরিশোধিত ডিক্রির দাবি আদায় করতে পারিবে এবং আদালত ওই মৰ্মে একটি সার্টিফিকেট ইস্যু করবেন।

তথ্য গোপন করে আগে দুই ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার ব্যাপারে জান্নাত আরা চৌধুরী বলেন, আমার আগের লোন এগুলো। সেগুলো সব শেষ হয়ে গেছে। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহানপুর থানার এসআই কাউছার আহম্মদ খান মোবাইলে কোনও বক্তব্য দিতে পারবেন না বলে কল কেটে দেন। শাহজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ফারুকুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। আসামিকে আমরা পাইনি। তাই গ্রেফতার করতে পারিনি। মামলা এখন তদন্তাধীন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker