আশুলিয়ায় একই পরিবারের ৩ জনকে হ’ত্যা, স্বামী-স্ত্রী গ্রেপ্তার

আশুলিয়ায় একই পরিবারের ৩ জনকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় মূলহোতা সাগর আলী (৩১) ও তার স্ত্রী ঈশিতা বেগম (২৫) কে গাজীপুরের শফিপুর এলাকা থেকে গেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-৪। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব জানায়, সাগর আলী এর আগে একই পরিবারের ৪ জনকে হত্যার দায়ে প্রায় সাড়ে ৩ বছর শাস্তি ভোগ করেন। পরে ২০২৩ সালের জুন মাসে জামিন পান সাগর। র‌্যাবের দাবি, রাজনৈতিক হত্যার উদ্দেশ্যে ২৮ লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে জামিনে বের করা আনা হয়। গ্রেপ্তার সাগর আলী টাঙ্গাইলের মোবারক ওরফে মোগবর আলীর ছেলে এবং তার স্ত্রী ঈশিতা বেগম জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাসিন্দা।

জানা যায়, সোমবার (২ অক্টোবর) র‌্যাব গাজীপুরের শফিপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাগর আলী ও তার অন্যতম সহযোগী স্ত্রী ঈশিতা বেগমকে গ্রেপ্তার করে। এসময় নিহত মোক্তারের লুটকৃত আংটি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, প্রথমে অর্থের লোভে ও পরবর্তীতে কাঙ্ক্ষিত অর্থ না পেয়ে তারা হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়। তারা জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সাভার বারইপাড়া এলাকার একটি চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় মোক্তারকে পার্শ্ববর্তী একটি কবিরাজি ও ভেষজ ওষুধের দোকানে তার শারীরিক সমস্যার বিষয়ে চিকিৎসা নিয়ে কথা বলতে দেখেন সাগর। তিনি জানতে পারে মোক্তার ওই দোকান থেকে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসা বাবদ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করেও কোনো ফল পায়নি। পরে সাগর কৌশলে মোক্তারকে ডেকে নিয়ে আসে এবং তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে মোক্তারের ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ ও আস্থা আছে। পরে সাগর তার স্ত্রী একজন ভালো কবিরাজ এবং তিনি তার সমস্যার সমাধান করে দিবে বলে মিথ্যা আশ্বাস দেন। এক পর্যায়ে তারা ৯০ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। সাগর ও তার স্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে ওষুধসহ তার বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করবে বলে জানান। পরে মোক্তার তার (সাগরের) সঙ্গে যোগাযোগ জন্য মোবাইল নাম্বার চাইলে সাগর তার আত্মীয়ের মোবাইল নাম্বার দেন। সাগর বাসায় গিয়ে স্ত্রীকে পুরো বিষয় খুলে বললে স্ত্রীও অনেক টাকার কথা শুনে রাজি হয়। তারা পরিকল্পনা করে ভুক্তভোগী মোক্তারের বাসায় গিয়ে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার কথা বলে তার পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাদের অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করবে। পরিকল্পনা মোতাবেক গাজীপুরের মৌচাকের একটি ফার্মেসি থেকে ৫০টির একবক্স ঘুমের ওষুধ কিনেন। পরে ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে তারা মোক্তারের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন এবং জামগড়া মোড়ে আসলে মোক্তার তাদের নিয়ে বাসায় যান। বাসায় গিয়ে তারা তাদের সমস্যার কথা শুনে ইসুবগুলের শরবতের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে তাদের ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার ওষুধ বলে খাওয়ায়। ওষুধের প্রভাবে মোক্তার তার স্ত্রী ও সন্তান ঘুমিয়ে পড়লে তারা আগে মোক্তার ও পরে স্ত্রীর হাত ও পা বাঁধে। তারপর মোক্তারের মানিব্যাগ, স্ত্রীর পার্স ও বাসার অন্যান্য স্থান থেকে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী তল্লাশী করে মাত্র ৫ হাজার টাকা পান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে তারা মোক্তারের গলায় বটি দিয়ে উপর্যপুরি কোপ দিয়ে হত্যা করে। পরে একই বটি দিয়ে স্ত্রী ও ছেলেকে পর্যায়ক্রমে কুপিয়ে হত্যা করে। সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা মোক্তারের হাতে থাকা আংটিটিও নিয়ে যান। পরবর্তীতে তারা উভয়ে ভিন্নপথে রিকশাযোগে গাজীপুরের মৌচাকে তার শ্বশুরবাড়ি (ভাড়া বাসায়) আসে এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকে। পরে হত্যার ঘটনাটি মিডিয়া ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার হলে তারা দুজন একসঙ্গে আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর গাজীপুরের শফিপুর এলাকা থেকে র‌্যাব তাদের গ্রেপ্তার করে।উল্লেখ্য, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাভারের আশুলিয়া জামগড়া এলাকায় বহুতল ভবনের ৪র্থ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে ভবনের অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করে। পরবর্তীতে ওই ফ্ল্যাট থেকে স্বামী, স্ত্রী ও তাদের ১২ বছরের সন্তানের অর্ধগলিত গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নৃশংস এই হত্যার ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। র‌্যাব আরও জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত সাগর মাদকাসক্ত ছিল এবং সে বিভিন্ন পেশার আড়ালে চুরি ও ছিনতাই করতেন। তিনি ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২০০ টাকার জন্য একই পরিবারের চারজনকে গলাকেটে হত্যা করে। ওই ঘটনায় র‌্যাব-১২ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে প্রায় সাড়ে ৩ বছর কারাভোগ করে ২০২৩ সালের জুন মাসে জামিন পেয়ে গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় তার শ্বশুরের ভাড়া বাসায় কিছু দিন অবস্থান করে। এরপর সে রাজমিস্ত্রি, কৃষি শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে ঢাকা, সিলেট ও টাঙ্গাইলে চুরি ও ছিনতাই করতেন।