অনেক আমলার দ্বিতীয় বাড়ি যুক্তরাষ্ট্র: ভিসা নীতিতে আতঙ্ক

ভিসা নীতি যতটা না রাজনৈতিক নেতাদের ওপর ব্যবহার করা যাবে, তার চেয়ে বেশি ব্যবহার করা যাবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর।
বর্তমানে যারা সচিব পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন এরকম ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ১৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে যাদের যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা রয়েছে। হয় তাদের সন্তানরা সেখানে লেখাপড়া করেন অথবা তাদের সেখানে ঠিকানা রয়েছে।
এরকম বাস্তবতার প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাবশালী আমলাদের একটি বড় অংশের যুক্তরাষ্ট্রে শেকড় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং যুক্তরাজ্যে বাড়ি আছে অন্তত ৩২ জন আমলার।
এদের মধ্যে কয়েকজন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্রিন কার্ডও নিয়েছেন এমন কথাও শোনা যায়। বাংলাদেশে যারা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে আছেন এদের বেশিরভাগেরই সন্তান-সন্ততিরা বিদেশে পড়াশোনা করেন। তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্র কানাডা ও যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করেন।
যাদের সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রে নেই বা যাদের ঘরবাড়ি যুক্তরাজ্য বা কানাডায় তারাও কিছুটা আতঙ্কে আছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসানীতির ফলে যুক্তরাজ্য ও কানাডাও প্রভাবিত হতে পারে বলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করছে। এর ফলে আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের নিরপেক্ষ অবস্থান তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়াও বিভিন্ন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীদের শেকড়ও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। একারণেই যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন ভিসানীতি বেশি আতঙ্ক তৈরি করেছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে। রাজনীতিবিদদের মধ্যে এই ভিসা নীতির খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সধারণ জনগণের মধ্যেও এই ভিসা নীতির প্রভাব খুব একটা পড়বে না। এই ভিসা নীতি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে যারা নির্বাচন সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকেন তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেন। নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান না করে।
অতীতে দেখা গেছে যে, প্রশাসনের মধ্যে অনেকে অতি উৎসাহ দেখিয়েছে, নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য অনভিপ্রেত কর্মকান্ড করেছেন। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইমিগ্রেশন আইনের ২১২ ধারা প্রয়োগ করেছেন।
এর ফলে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে কথা বলে দেখা গেছে যে, তারা নতুন ভিসা নীতি নিয়ে আতঙ্কিত। আওয়ামী লীগ থেকেও যারা বেশি আওয়ামী লীগ হয়ে গিয়েছিলেন, তারা এখন নিজেদের গুটিয়ে নেয়া শুরু করেছেন। কারণ তাদের শেকড় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমলার যুক্তরাষ্ট্র কানাডা এবং যুক্তরাজ্যে যেমন বাড়িঘর রয়েছে তেমনি তাদের অনেক আত্মীয় পরিজনও রয়েছে। কিছুদিন আগে কানাডায় কাদের বাড়িঘর আছে এরকম একটি বিষয় নিয়ে তথ্যানুসন্ধান করেছিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সেই তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে যে, কানাডায় বেগম পাড়ায় বাড়ি রয়েছে এমন ব্যাক্তিদের মধ্যে আমলারাই বেশি। কাজেই নতুন ভিসা নীতি আমলাদের জন্যই বেশি প্রযোজ্য বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে আগামী নির্বাচনে প্রশাসনের ভুমিকায় একটি নাটকীয় পরিবর্তন আসমে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
সুত্রঃ বাংলা ইনসাইডার