‘অনলাইন এমডি’তে চলছে বিএসসিএল

অনুমোদিত ছুটি ছিল এক মাসের; কিন্তু দুই মাসেও কর্মস্থলে ফেরেননি বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল ইসলাম। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য ছুটি নিয়েছিলেন তিনি। এখনো যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করছেন। নিচ্ছেন বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। সেখান থেকেই অনলাইনে যুক্ত হন নিয়মিত দাপ্তরিক কাজে, ই-নথির মাধ্যমে স্বাক্ষর দেন বিভিন্ন দলিলে। এ কারণে বিএসসিএলে এখন তিনি ‘অনলাইন এমডি’ নামে পরিচিত।শফিকুল ২০২১ সালের ১৩ জুন অতিরিক্ত দায়িত্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর থেকে তিনি বিএসসিএলের কারিগরি, গবেষণা ও পরিকল্পনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে প্রতিষ্ঠানটির এমডির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত আগস্টে এক মাসের ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি।প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী শাহজাহান মাহমুদ স্বাক্ষরিত ছুটি মঞ্জুরের প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, আগস্টের ৪ তারিখ থেকে সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ছুটি দেওয়া হয় শফিকুলকে। ছুটি মঞ্জুরের শর্তে উল্লেখ করা হয়, একক যাত্রার জন্য এ ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে। ৩ নম্বর শর্তে বলা হয়, কোনো অবস্থাতেই ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হবে না। ৫ নম্বর শর্তে বলা হয়, ছুটির মেয়াদ শেষে যথাসময়ে অফিসে যোগদান করতে হবে। এসব নিয়ম ও শর্তের কোনো তোয়াক্কা করেননি তিনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনো যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন তিনি।

প্রতিষ্ঠানটির একটি সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান শাহজাহানের প্রত্যক্ষ মদদে এমন অবৈধ সুযোগ ভোগ করছেন শফিকুল। যে কারণে ছুটির মেয়াদ শেষেও কর্মস্থলে যোগ না দেওয়ার বিষয়টি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে গোপন রাখা হয়।এদিকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর শফিকুলকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বিএসসিএল। চেয়ারম্যান শাহজাহান স্বাক্ষরিত সেই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবেন শফিকুল ইসলাম। দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও তার চাকরি এবং বেতন ও অন্যান্য ভাতা নিয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। যদিও গত সোমবারও শফিকুল এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।জানা গেছে, গত অর্থবছরে বেশ কয়েকটি কেনাকাটার ঘটনায় শফিকুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি অভিযোগ পড়েছে বলেও শোনা যায়। এ দায় থেকে বাঁচতেই বিদেশ গিয়ে এখন পালিয়ে রয়েছেন তিনি।এসব বিষয়ে জানতে শফিকুল ইসলাম এবং শাহজাহান মাহমুদের হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তারা দুজনই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। বিএসসিএলের কোম্পানি সেক্রেটারি রফিকুলের হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার শরীর অসুস্থ, জ্বর। তারিখগুলো আমার মনে নেই। আমাদের অ্যাডমিন বিভাগ থেকে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। আমি বলে দিচ্ছি। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রতিবেদকের সঙ্গে বিএসসিএলের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি।অন্যদিকে, শফিকুল ইসলামের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি জানা নেই, আপনার থেকেই জানলাম। আমি এ বিষয়ে খোঁজখবর করব এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেব। বিএসসিএল থেকে বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের কাছে গোপন রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে জব্বার বলেন, এগুলো গোপন রাখার সুযোগ নেই। তিনি ফিরে আসতে না চাইলে বা বিদেশে থেকে গেলে আইনানুগভাবে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আমি খোঁজ নিচ্ছি।